পদ্য ও গদ্য বাংলা উপভাষার পার্থক্য

শেয়ার করুনঃ

Loading

 

পদ্য ও গদ্য বাংলা উপভাষার পার্থক্য

 

পদ্য ও গদ্যের মধ্যে পার্থক্য অবশ্যই আছে। মনের ভাবনা কল্পনা অনুভূতি রঞ্জিত হয়ে যথাযথ শব্দসম্ভারে বাস্তব সুষমামণ্ডিত চিত্রাত্মক ও ছন্দময় রূপ হল কবিতা বা পদ্য, ফলে পদ্যরূপের পদ-বিন্যাস, শব্দ-প্রয়োগ, ক্রিয়ার ব্যবহার গদ্যরূপের মতো নয়। কেননা গদ্য হল মানুষের ভাবনা-চিন্তার সুনিয়ন্ত্রিত, সুনির্বাচিত বুদ্ধিনিষ্ঠ প্রকাশ।

[ কালকেতু বুলান মণ্ডলকে বলছে ]

পদ্যরূপ:

“আমার নগরে বৈস                     যত ইচ্ছা চাষ চষ

তিনসন বাহি (বই) দিয় কর।

হাল পীছে একতঙ্কা                  না করিহ কারে শঙ্কা

পাটায় নিসান মোর ধর ॥

নাঞি দিহ বাউড়ি                      বয়্যা বস্যা দিহ কড়ি

ডিহিদার নাহি দিব দেশে।

সেলামি বাঁশগাড়ি                      নানা বাবে যত কড়ি

নাহি নিব গুজরাট বাসে ॥”

(চণ্ডীমঙ্গল—মুকুন্দরাম চক্রবর্তী)

গদ্যরূপ: আমার নগরে বাস করে যত ইচ্ছা চাষ করো। তিন সন অন্তর কর দিও, আর হাল প্রতি এক টাকা করে দিও। কাউকে ভয় করবে না। সময়মতো পাট্টার সাহায্যে আমার সংকেত ধ্বনি বুঝবে। অগ্রিম কোনো খাজনা দিতে হবে না, রয়ে বসে দেবে। দেশেগ্রামগুলির স্বত্বাধিকার কাউকে দিচ্ছি না। বাঁশগাড়ি সেলামি হিসেবে দেবে। নানা দফায় প্রাপ্য টাকা দেবে, গুজরাটে বাস করার জন্য কোনো টাকা নেব না।

[ শব্দার্থ : বাউড়ি : অগ্রিম খাজনা, নিসান : সংকেত ধ্বনি, বাহি : অন্তর, ব্যবধান, পীছে : প্রতি, বাবে : দফায়, ডিহিদার : কয়েকটি গ্রামের স্বত্বাধিকারী ]

ত্রিপদী ছন্দে লেখা উদ্ধৃত কবিতাংশটির ভাষা বৈশিষ্ট্যের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় এর মধ্যে রাঢ়ি ও বঙ্গালি উপভাষা বৈশিষ্ট্যের প্রবণতা রয়েছে। যেমন—বসি > বইস / বৈস, রহিয়া > রয়্যা, বসিয়া > বৈস্যা। আবার অ / য়-এর ‘হ’-এর মতো উচ্চারণ প্রবণতাও লক্ষণীয়। যথা—দিয় > দিহ, নাই > নাহি, করিয় > করিহ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গদ্যরূপটি রাঢ়ি উপভাষা ও কিছুটা বঙ্গালি উপভাষা থেকে গড়ে ওঠা আদর্শ লেখ্য গদ্য। স্বতন্ত্র উপভাষায় আমরা কথা বলি কিন্তু আদর্শ গদ্য ভাষায় আমরা লিখি।

সুতরাং গদ্য ও পদ্য ভাষার মধ্যে একটা পার্থক্য রক্ষিত হয়, সেটি হল—

পদ্য ভাষা:

১। পদ্যের ক্ষেত্রে বাক্যের সাধারণ বিন্যাসক্রম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্ষিত হয় না।

২। পদ্যের ভাষা ছন্দবদ্ধ কাব্যভাষা।

৩। পদ্যে সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ লক্ষিত হয়।

৪। ছন্দ কবিতায় অন্ত্যমিল থাকে।

 

গদ্য ভাষা:

১। গদ্যের ক্ষেত্রে বাক্যের বিন্যাসক্রম রক্ষিত হয়।

২। গদ্যের ক্ষেত্রে ছন্দের অনুশাসন নেই।

৩। গদ্যের ক্ষেত্রে সাধু ও চলিত রীতির মিশ্রণ বর্জন করা হয়েছে।

৪। গদ্যে অন্ত্যমিল থাকে না।

 

0
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

বিদ্যাকল্পে গল্প ও অডিও স্টোরি প্রকাশ করার জন্য আজই যুক্ত হন