বাক্য কি ?
বাক্য : যে-পদ বা পদসমষ্টির দ্বারা বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করা হয় সেই পদ বা পদসমষ্টিকে বাক্য বলে। এই পদ বা পদসমষ্টি পরস্পর অন্বিত বা সম্বন্ধযুক্ত।
মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে গেলে বাক্যের কর্তা ও সমাপিকা-ক্রিয়া থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। তবে এই কর্তা ও ক্রিয়া কোথাও প্রকাশ্যভাবে, কোথাও উহ্য থাকে। যেমন—‘সে পড়ে’ ; ‘আমি খেলি’—এই বাক্য দুটিতে কর্তা (সে, আমি) ও ক্রিয়া (পড়ে, খেলি) প্রকাশ্যভাবে অবস্থান করছে। আবার, ‘যাবে’, ‘আসব’ এই পদ দুটি আসলে দুটি বাক্যের ক্রিয়াপদ। এদের কর্তা প্রথম বাক্যে ‘তুমি’ এবং দ্বিতীয় বাক্যে ‘আমি’ ঊহ্য আছে।
বাক্যের বৈশিষ্ট্য
এ কথা ঠিক, পদসমষ্টি যদি অর্থের দিক থেকে সম্পূর্ণ না হয়ে ওঠে তাহলে তাকে বাক্যের অভিধায় ফেলা যাবে না। এই অভিধায় আসতে গেলে সেই পদসমষ্টির কতকগুলি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার।
কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
(১) বিকেলে সূর্য উদয় হয় ; (২) আমি ভাত খেয়ে ; (৩) জড়ো অনেক মাঠে লোক হয়েছে।—ওপরের উদাহরণগুলিতে তিনটি পদসমষ্টি রয়েছে, কিন্তু বাক্য নয়। কেননা তাদের দিয়ে কোনোভাবে অর্থপূর্ণ ভাব প্রকাশ পাচ্ছে না। ওপরের প্রথম উদাহরণে কর্তা, ক্রিয়া, অন্যপদ সবই আছে কিন্তু সে-টি বাক্য নয়, কারণ এই পদসমষ্টি দিয়ে যে-ভাব প্রকাশ পাচ্ছে তা সূর্যোদয় সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতার অনুরূপ নয়। কাজেই বাক্য হিসেবে এটি অর্থহীন, কেননা এর যোগ্যতা নেই। দ্বিতীয় উদাহরণে যে-পদসমষ্টি আছে তাদের দিয়ে বক্তার মনের ভাব-প্রকাশের ও শ্রোতার অর্থ গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এক্ষেত্রে পদসমষ্টির আকাঙ্ক্ষার অভাব থেকে গেল। কাজেই আকাঙ্ক্ষার অভাবে এটি বাক্য নয়। তৃতীয় উদাহরণে পদসমষ্টি অর্থ-সম্পর্কযুক্ত পদগুলি পারস্পরিক নৈকট্যের বা আসত্তির অভাবে একে অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাই তাদের দিয়ে কোনো অর্থই প্রকাশ পাচ্ছে না। ফলে এই আসত্তির অভাবে পদসমষ্টি বাক্য নয়। সুতরাং বলা যায়—পদসমষ্টিকে বাক্য হতে গেলে তার তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার—(১) যোগ্যতা (২) আকাঙ্ক্ষা (৩) আসত্তি।
সুতরাং নতুন করে বাক্যের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গেলে বলতে হয়—যে পদসমষ্টির যোগ্যতা, আকাঙ্ক্ষা ও আসত্তি আছে তাকেই বাক্য বলে।
বলাবাহুল্য, প্রত্যেক বাক্যেই দুটি প্রধান অংশ থাকে—(১) উদ্দেশ্য ও (২) বিধেয়।
উদ্দেশ্য : বাক্যে যাকে উদ্দেশ্য করে বা যার সম্পর্কে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলে।
বিধেয় : উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় তাকে বলা হয় বিধেয়।
যেমন—‘পিকু ভাত খায়’। এক্ষেত্রে ‘পিকু’ হল বাক্যটির উদ্দেশ্য, আর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হচ্ছে—‘ভাত খায়’। এটি হল বিধেয়। বস্তুত, বিধেয় হচ্ছে বাক্যের মূল বক্তব্য বিষয়, আর উদ্দেশ্য সেই বক্তব্যের আধার বা অবলম্বন।
প্রসঙ্গত বলা যায়, উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয় অংশকে সম্প্রসারিত করে বাক্যকে দীর্ঘতর করা যায়। উদ্দেশ্য অংশে ও বিধেয় অংশে বিভিন্ন পদ যুক্ত করে সম্প্রসারিত করা যায়।
যেমন:
উদ্দেশ্য সম্প্রসারণ | বিধেয় সম্প্রসারণ |
দুরন্ত পিকু | দুপুরে ভাত খায়। |
বারাসতের দুরন্ত পিকু | বাবার সঙ্গে দুপুরে ভাত খায়। |
উত্তর বারাসতের দুরন্ত পিকু | বাবা-মার সঙ্গে দুপুরে ভাত খায়। |