সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার সংজ্ঞা এবং বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য

শেয়ার করুনঃ

Loading

সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার সংজ্ঞা এবং বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য

 

সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার সংজ্ঞা

সাধু ভাষা : যে ভাষারীতির মধ্যে তৎসম (সংস্কৃতজ) শব্দের প্রাধান্য লক্ষিত হয়, যার ক্রিয়াপদে সর্বনাম ও বিভক্তির বদলে ব্যবহৃত অনুসর্গের প্রচলিত পূর্ণ বিস্তৃত রূপ ব্যবহৃত হয়, যার বাক্যরীতি বিশেষভাবে নিয়মাধীন, যার মধ্যে সমাসবদ্ধ ও সন্ধিবদ্ধ পদের প্রয়োগ প্রাধান্য পায় এবং যার বাক্যবিন্যাসে সহজ গাম্ভীর্য ও পরিপাট্য লক্ষিত হয় তাকে বলে সাধু ভাষা।

 

চলিত ভাষা : যে ভাষারীতির মধ্যে তদ্ভব ও দেশি-বিদেশি শব্দের আধিক্য দেখা যায়, যার মধ্যে ক্রিয়া, সর্বনাম, অনুসর্গের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়, যার পদবিন্যাসে সাধু ভাষা অপেক্ষা অনেকখানি নমনীয়, সমাসবদ্ধ ও সন্ধিবদ্ধ পদের ব্যবহার খুব কম এবং যার বাক্যবিন্যাস অনেকখানি গাম্ভীর্যহীন তাকে বলা হয় চলিত ভাষা।

 

সাধু ও চলিত রীতির বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য

(১) সাধারণত সাধু ভাষার শব্দভাণ্ডারে তৎসম (সংস্কৃতজ) শব্দ বেশি, চলিত ভাষায় অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের আধিক্য থাকে।

যথা—বৃক্ষ / তরু (সাধু) > গাছ (চলিত), হস্ত (সাধু) > হাত (চলিত), ঢাক, ঢোল, ঢেঁকি (দেশি শব্দ এবং চলিতে ব্যবহৃত, স্কুল, কলেজ, চেয়ার (ইংরেজি শব্দ এবং চলিতে ব্যবহৃত) ইত্যাদি।

(২) সাধু ভাষায় সংস্কৃত অনুগামী সমাসবদ্ধ ও সন্ধিবদ্ধ শব্দের প্রাধান্য, চলিত ভাষায় এদের ব্যবহার খুবই কম। ব্যবহার করার সময় সন্ধি ভেঙে, সমাস ভেঙে ব্যবহার করা হয়।

যথা—লোভানল (সাধু) > লোভের আগুন (চলিত) মনস্কামনা (সাধু) > মনের ইচ্ছা (চলিত), চীরবসন (সাধু) > ছেঁড়া কাপড় (চলিত) ইত্যাদি।

(৩) সাধু ভাষায় ক্রিয়াপদের (সমাপিকা—অসমাপিকা) প্রচলিত পূর্ণ বিস্তৃত রূপ ব্যবহৃত হয়। চলিত ভাষায় এদের প্রচলিত সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়।

যথা—করিতেছি (সাধু) > করছি (চলিত), করিয়াছি (সাধু) > করেছি (চলিত), করিয়াছিলাম (সাধু) > করেছিলাম (চলিত), বলিয়া (সাধু) > বলে (চলিত), থামিয়া (সাধু) > থেমে (চলিত), শুনিয়া (সাধু) > শুনে (চলিত) ইত্যাদি।

(৪) সাধু ভাষায় সর্বনাম পদে পূর্ণ বিস্তৃত রূপ ব্যবহৃত হয়। চলিত ভাষায় এদের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়।

যথা—তাহারা (সাধু) > তারা (চলিত), তাহাকে > তাকে, উহা > ও, উহাকে > ওকে, উহাদের > ওদের, ইহাদের > এদের, ইহাকে > একে, যাহার > যার, যাহারা > যারা ইত্যাদি।

(৫) সাধু ভাষায় অব্যয়, অনুসর্গের ব্যবহারে প্রচলিত দীর্ঘ রূপ ব্যবহৃত হয়। চলিত ভাষায় এদের সহজ সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়।

যথা—দ্বারা (সাধু) দিয়ে (চলিত), সহিত > সঙ্গে > সাথে, হইতে > হতে > থেকে, অভ্যন্তরে > ভিতরে > ভেতরে, অপেক্ষা > চেয়ে, ব্যতীত > ছাড়া ইত্যাদি।

(৬) সাধু ভাষায় যৌগিক ক্রিয়াপদের ব্যবহার বেশি। চলিত ভাষায় এর ব্যবহার অপেক্ষাকৃত কম হলেও তার সহজ রূপ ব্যবহৃত হয়।

যথা—গমন করা (সাধু) > যাওয়া (চলিত), শয়ন করা > শোয়া, শ্রবণ করা > শোনা, আহার করা > খাওয়া, গ্রহণ করা > নেওয়া, গান করা > গাওয়া, গমন করিতেছি > যাচ্ছি, শয়ন করিলাম > শুলাম, গ্রহণ করিল > নিল ইত্যাদি।

(৭) একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল—প্রচলিত প্রবাদ-প্রবচন, বাগ্ধারা (idiom) সাধু ভাষায় তেমন ব্যবহার করা হয় না। চলিত ভাষায় এদের বহুল ব্যবহার আছে। কেননা এগুলি কথ্য ভাষা থেকে উঠে এসেছে।

(৮) সাধু ভাষাতে যেমন তৎসম শব্দের প্রাধান্য বেশি তেমনি চলিত ভাষায় ধ্বনি পরিবর্তনের প্রভাবে মূলত স্বরসংগতি, অভিশ্রুতি ও সমীভবনের নিয়মানুসারে অল্পবিস্তর পরিবর্তিত রূপই ব্যবহৃত হয়।

যথা—বাহিরে (সাধু) > বাইরে, (চলিত), ভিতর > ভেতর, উনান > উনুন, নাই > নেই, বিকাল > বিকেল, কলিকাতা > কলকাতা, কুৎসিত > কুচ্ছিত, মহোৎসব > মোচ্ছব, যতদূর > যদ্দুর ইত্যাদি।

 

0
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

বিদ্যাকল্পে গল্প ও অডিও স্টোরি প্রকাশ করার জন্য আজই যুক্ত হন