সাধু ভাষার উদাহরণ :
নদীতে স্নান করিবার সময় রাজদত্ত অঙ্গুরীয় শকুন্তলার অঞ্চলকোণ হইতে সলিলে পতিত হইয়াছিল। পতিত হইবামাত্র এক অভিবৃহৎ রোহিত মৎস্যে গ্রাস করে। সেই মৎস্য, কতিপয় দিবস পর, এক ধীবরের জালে পতিত হইল। ধীবর, খণ্ড খণ্ড বিক্রয় করিবার মানসে ঐ মৎস্যকে বহু অংশে বিভক্ত করিতে করিতে তদীয় উদরমধ্যে অঙ্গুরীয় দেখিতে পাইল। ঐ অঙ্গুরীয় লইয়া, পরম উল্লসিত মনে, সে এক মণিকারের আপণে বিক্রয় করিতে গেল। (—ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর)
চলিত ভাষার উদাহরণ:
পুল পেরিয়ে সামনে একটা বাঁশ বাগান পড়ল। তারি মধ্য দিয়ে রাস্তা। মচমচ করে শুকনো বাঁশ পাতার রাশ ও বাঁশের খোসা জুতোর নিচে ভেঙে যেতে লাগল। পাশে একটা ফাঁকা জায়গায় বুনো গাছপালা লতা ঝোপের ঘন সমাবেশ। সমস্ত ঝোপটার মাথাজুড়ে সাদা সাদা তুলোর মতো রাধালতার ফুল ফুটে রয়েছে। (—বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়)
সাধু ও চলিত ভাষার রুপান্তরের উদাহরণ
সাধু ও চলিত ভাষার রুপান্তরের উদাহরণ নিম্নে দেওয়া হল:
সাধু থেকে চলিতে রূপান্তরের উদাহরণ
সাধু:
তৎকালে আমাদিগের পরিধেয় বস্ত্র বলিতে ছিল একখানা পাঁচ হাতের মলিন ধুতি। বলিলে তোমরা হয়তো বিশ্বাস করিবে না যে, দশম-বর্ষীয় বালকেরাও ধুতি পরিয়াই বিদ্যালয়ে যাইত। গ্রামের স্ত্রীলোকগণ নদীতে জল ভরিতে যাইত। অধিকাংশ গৃহের বালিকারা পড়াশোনা কাহাকে বলে তাহাই জানিত না।
চলিত:
সে সময় আমাদের পরনের পোশাক বলতে ছিলো একখানা পাঁচ হাতের ময়লা ধুতি। বললে তোমরা হয়তো বিশ্বাস করবে না যে, দশ বছরের ছেলেরাও ধুতি পরেই ইস্কুলে যেতো। গ্রামের মহিলারা নদীতে জল ভরতে যেত। বেশিরভাগ বাড়ির মেয়েরা পড়াশোনা কাকে বলে তা-ই জানতো না।
চলিত থেকে সাধুতে রূপান্তরের উদাহরণ
চলিত:
“এ কেমন করে সম্ভব?” নিখিল একেবারে রেগে আগুন হয়ে প্রশ্ন করল। তার চেহারা দেখেই সদানন্দ রায় বুঝতে পারলেন, তিনি একটা অন্যায় প্রস্তাব দিয়ে ফেলেছেন। হতে পারে নিখিলের টাকার জোর তার বাবার মতো নেই, তবুও যে আভিজাত্যের ভিতর সে ছোটোবেলা থেকে লালিত হয়েছে, বাবার মৃত্যুর পর এই পনেরো বছরে তার গায়ে সে দাগ লাগতে দেয়নি।
সাধু:
“ইহা কেমন করিয়া সম্ভব?” নিখিল রাগিয়া একেবারে অগ্নিশর্মা হইয়া প্রশ্ন করিল। তাহার মূর্তি দেখিয়াই সদানন্দ রায় বুঝিতে পারিলেন, তিনি একটা অন্যায় প্রস্তাব দিয়া ফেলিয়াছেন। হইতে পারে নিখিলের টাকার জোর তাহার বাবার মতো নাই, তথাপি যে আভিজাত্যের ভিতর সে শৈশবাবধি লালিত হইয়াছে, পিতার মৃত্যুর পর এই পঞ্চদশ বৎসরে তাহার গায়ে সে দাগ লাগিতে দেয় নাই।