কাল বিকেলে শিলাইদহে পৌঁছেছিলুম – ছিন্নপত্র – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শেয়ার করুনঃ

Loading

কাল বিকেলে শিলাইদহে পৌঁছেছিলুম - ছিন্নপত্র - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

 

 

শিলাইদা,

২১শে জুলাই,

১৮৯২।

 

কাল বিকেলে শিলাইদহে পৌঁছেছিলুম আজ সকালে আবার পাবনায় চলেছি । নদীর যে রোথ্ ! যেন লেজ-দোলানো কেশর-ফোলানো তাজা বুনো ঘোড়ার মত । গতিগৰ্ব্বে ঢেউতুলে ফুলে ফুলে চলেছে—এই খ্যাপা নদীর উপর চড়ে আমরা দুলতে দুলতে চলেচি। এর মধ্যে ভারি একটা উল্লাস আছে। এই ভরা নদীর যে কলরব সে আর কি বল্‌ব ! ছল্‌ছল্ খল্‌খল্ করে কিছুতে যেন আর ক্ষান্ত হতে পারচেনা, ভারি একটা যৌবনের মত্ততার ভাব। এ তবু গড়ই নদী—এখান থেকে আবার পদ্মায় গিয়ে পড়তে হবে—তার বোধ হয় আর কুলকিনারা দেখবার যো নেই—সে মেয়ে বোধ হয় একেবারে উন্মাদ হয়ে ক্ষেপে নেচে বেরিয়ে চলেছে, সে আর কিছুর মধ্যেই থাকতে চায় না। তাকে মনে করলে আমার কালীর মূর্তি মনে হয়—নৃত্য করচে, ভাঙচে, এবং চুল এলিয়ে দিয়ে ছুটে চলেছে। মাঝিরা বলছিল নুতন বর্ষায় পদ্মার খুব “ধার” হয়েছে। ধার কথাটা ঠিক । তীব্রস্রোত যেন চক্‌চকে খড়্গের মত— পাৎলা ইস্পাতের মত একেবারে কেটে চলে যায় — প্রাচীন বিটনদের যুদ্ধরথের চাকায় যেমন কুঠার বাঁধা—দুইধারের তীর একেবারে অবহেলে ছারখার করে দিয়ে চলেচে।

 

কাল যে কাণ্ডটি হয়েছিল সে কিছু গুরুতর বটে। কাল যমরাজের সঙ্গে একরকম হাউ-ড্যু-ডু করে আসা গেছে। মৃত্যু যে ঠিক আমাদের নেক্সটু-ডোর-নেবার, তা এরকম ঘটনা না হলে সহজে মনে হয় না । হয়েও বড় মনে পড়ে না। কাল চকিতে র মত যাঁর আভাস পাওয়া গিয়েছিল আজ তাঁর মূর্তিখানা কিছুই স্মরণ হচ্চে না। অপ্রিয় অনাবশ্যক বন্ধুর মত একেবারে অনাহূত ঘাড়ে এসে না পড়লে তাঁর বিষয়ে আমরা বড় একটা ভাবিনে। যদিও তিনি আড়াল থেকে আমাদের সর্ব্বদাই খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন। যা হোক্ তাঁকে আমি বহুত বহুত সেলাম দিয়ে জানিয়ে রাখচি তাঁকে আমি এক কানা কড়ির কেয়ার করিনে—তা তিনি জলেই ঢেউ তুলুন আর আকাশ থেকে ফু-ই দিন—আমি আমার পাল তুলে চল্লুম – তিনি যতদুর করতে পারেন তা পৃথিবীসুদ্ধ সকলেরই জানা আছে, তার বেশি আর কি করবেন ! যেম্‌নি হোক্, হাঁউমাউ করব না !

 

0
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

বিদ্যাকল্পে গল্প ও অডিও স্টোরি প্রকাশ করার জন্য আজই যুক্ত হন