এমন সুন্দর শরতের সকালবেলা, ছিন্নপত্র – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শেয়ার করুনঃ

Loading

 

এমন সুন্দর শরতের সকালবেলা, ছিন্নপত্র - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

 

শিলাইদহ,

৩রা ভাদ্র,

১৮৯২

 

এমন সুন্দর শরতের সকালবেলা! চোখের উপর যে কি সুধাবর্ষণ করচে সে আর কি বল্ব! তেমনি সুন্দর বাতাস দিচ্চে এবং পাখী ডাক্‌চে। এই ভরা নদীর ধারে বর্ষার জলে প্রফুল্ল নবীন পৃথিবীর উপর শরতের সোনালি আলো দেখে মনে হয় যেন আমাদের এই নবযৌবনা ধরণীসুন্দরীর সঙ্গে কোন্ এক জ্যোতির্ম্ময় দেবতার ভালবাসা চল্‌চে—তাই এই আলো এবং এই বাতাস, এই অর্দ্ধ উদাস অর্দ্ধ সুখের ভাব, গাছের পাতা এবং ধানের ক্ষেতের মধ্যে এই অবিশ্রাম স্পন্দন, জলের মধ্যে এমন অগাধ পরিপূর্ণতা, স্থলের মধ্যে এমন শ্যামশ্রী, আকাশে এমন নিৰ্ম্মল নীলিমা। প্রেমের যেমন একটা গুণ আছে তার কাছে জগতের মহা মহা ঘটনাও তুচ্ছ মনে হয় এখানকার আকাশের মধ্যে তেমনি যে একটি ভাব ব্যাপ্ত হয়ে আছে তার কাছে কলকাতার দৌড়ঝাঁপ হাঁসফাঁস ধড়ফড়ানি ঘড়ঘড়ানি ভারি ছোট এবং অত্যন্ত সুদূর মনে হয়। চারদিক থেকে আকাশ আলো বাতাস এবং গান একরকম মিলিতভাবে এসে আমাকে অত্যন্ত লঘু করে আপনাদের সঙ্গে যেন মিশিয়ে ফেল্‌চে—আমার সমস্ত মনটাকে কে যেন তুলিতে করে তুলে নিয়ে এই রঙীন শরৎপ্রকৃতির উপর আর এক পোঁচ রঙের মত মাখিয়ে দিচ্চে, – তাতে করে এই সমস্ত নীল সবুজ এবং সোনার উপর আর একটা যেন নেশার রং লেগে গেছে। বেশ লাগ্‌চে। “কি জানি পরাণ কি যে চায়” বল্‌তে লজ্জা বোধ হয় এবং শহরে থাকলে বল্ তুম না—কিন্তু ওটা ষোলো আনা কবিত্ব হলেও এখানে বল্‌তে দোষ নেই । অনেক পুরোনো শুকনো কবিতা — কলকাতায় যাকে উপহাসানলে জ্বালিয়ে ফেলবার যোগ্য মনে হয় তারা এখানে আসবামাত্র দেখতে দেখতে মুকুলিত পল্লবিত হয়ে উঠে।

 

0
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

বিদ্যাকল্পে গল্প ও অডিও স্টোরি প্রকাশ করার জন্য আজই যুক্ত হন