ঋজুদার সঙ্গে বক্সার জঙ্গলে – বুদ্ধদেব গুহ
এক
কী রে রুদ্র!
ভটকাই মনমরা হয়ে বলল, ঋজুদা কি শুধু শুধুই বেড়াতে যাবে! এবারেও? সেবারে বলল, ভীরাপ্পানের খোঁজে যাবে নীলগিরি পাহাড়ে কর্ণাটক আর তামিলনাড়ুর সীমান্তে, শেষ অবধি তাও গেল না, মধ্যে দিয়ে আমার মাথাটাই ন্যাড়া করতে হল। মিছিমিছি। ছিঃ।
তাতে আর ক্ষতি কী হল! তোর মাথার ভিতরে যে গোবরের ঢিবি তা তো আর লোকে দেখতে-জানতে পায়নি। চুল ফেলে বিশেষ ক্ষতি তো করিসনি নিজের।
ঋজুদার উপরে ভটকাই এতটাই বিরক্ত ছিল যে আমার এই কথার একটা লাগসই পাল্টাই দেবারও ইচ্ছে দেখাল না।
ভাবলাম, ভেরী মাচ আনলাইক ভটকাই!
ঋজুদা একটু বাথরুমে গেছিল। আমি আর ভটকাই ঋজুদার বিশপ লেফ্রয় রোডের বসার ঘরে বসে কথা বলছিলাম।
বললাম, সেবারে নীলগিরিতে আমাদের নিয়ে যায়নি বটে ঋজুদা কিন্তু তার বদলে মণিপুরে যে গেলাম আমরা। ইম্ফলে এবং নাগাল্যান্ডেও। কোহিমা, তাদুবী, মাও এবং কাঙ্গপোকপি। মণিপুর আর মাইনমারের সীমান্ত ‘মোরে’তে? আর কাঙ্গপোকপির রহস্যর জট খোলাতে কি কম অ্যাডভেঞ্চার ছিল? ঋজুদার গোয়েন্দা কাহিনীর মধ্যে তো শুধুই অ্যালবিনো আর কাঙ্গপোকপি। কত যে নাম হল আমাদের। তোর সবটাতেই বাড়াবাড়ি।
ঋজুদা ফিরে এল। বলল, কী হল? মিস্টার ভটকাই-এর মুখ গোমড়া কেন রে রুদ্র?
তারপর বলল, এবারে অ্যাডভেঞ্চার করতে, খুনিকে খুঁজে বের করতে বা নিনিকুমারের বাঘের মতন মানুষখেকো বাঘ বা লবঙ্গীর পাগলা হাতি মারতে যাওয়া নয়। এবারে বক্সার জঙ্গলে এমনিই যাব। শুধুই জঙ্গল দেখতে। যে-কোনও জঙ্গলের মধ্যে, যে-কোনও পাখির ডাকের শব্দে, ইশারা করে চলে যাওয়া অচেনা নদীর বাঁকে বাঁকে যে কত গভীর গোপন সব রহস্য, কত কিছুর আবিষ্কার, তার সঙ্গে কি কোনও একটিমাত্র রহস্যের বা রহস্য উদঘাটনের তুলনা চলে রে! বক্সাতে এমন অনেক গাছপালা, পাখি, নদী দেখতে পাবি, যা সব তোরা আগে তো দেখিসইনি, এমনকী আমিও দেখিনি। তবে পড়েছি। ছবি দেখেছি সেই সব গাছ-গাছালির, পাখ-পাখালির।
তারপর একটু থেমে বলল, আমি তো উত্তেজনাতে অধীর হয়ে আছি, সেই জঙ্গলে, সেই টাইগার প্রজেক্টে যাব বলে, আর তোরা অত মনমরা কেন? ইচ্ছে না করলে, যাস না। আমি তো জোর করিনি। কৌশিক, সুশান্ত, বামা, মধুমিতা এরা সব আমার সঙ্গে যেতে পারলে খুশিতে একেবারে ডগমগ করত। এখন মনে হচ্ছে আমার যে, আমি ভুল করেই চেলা বানিয়েছি তোকে আর ভটকাইকে। তোরা আমার চেলা আসলে নোস, চামুণ্ডা।
আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম, আমি নই ঋজুদা, আমি কিন্তু মনমরা নই। বরং আমি তো লাফাচ্ছিই যাব বলে। আমি তোমার চেলা ছিলাম, চেলা আছি। ভটকাইটাই চামুণ্ডা।
