বোকার বাণিজ্য হাসির গল্প জসীম উদ্দিন
এক ছিল তাঁতি। ঘরে বসিয়া কাপড় বোনে। ব্যাপারীরা আসিয়া তাহাকে ঠকাইয়া কম দামে কাপড় কিনিয়া লইয়া যায়। তাহার বউ তাহাকে পরামর্শ দিল, ‘তুমি হাটে যাইয়া কেন কাপড় বেচো না?’
পরামর্শটি তাঁতির খুব পছন্দ হইল। সে নৌকাখানা ভালোমতো সেঁচিয়া বড় একটা লম্বা দড়ি দিয়া ঘাটে বাঁধিয়া রাখিল। রাত্র হইলে কাপড়ের বোঝা নৌকায় রাখিয়া তাঁতি নৌকার দড়ি না খুলিয়াই নৌকা বাহিতে আরম্ভ করিল। নদীতে ছিল খুব স্রোত। তাঁতি খানিক নৌকা বাহিয়া আগাইয়া যায়, আবার স্রোত তাহাকে পিছাইয়া আনে। এভাবে সারারাত্র নৌকা বাহিয়া সে একটুও আগাইতে পারিল না। তাহার কিন্তু মনে হইল, সে নৌকা বাহিয়া অনেক দূর চলিয়া আসিয়াছে।
সকালবেলা তাঁতির বউ নদীতে পানি লইতে আসিয়াছে। তাঁতি তাহাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘মা লক্ষ্মী! বলিতে পারো এটা কোন ঘাট?’ তাঁতির বউ তাহাকে চিনিতে পারিয়াছে। বউকে মা বলা খুবই খারাপ। সে ঝাঁটা তুলিয়া তাঁতিকে মারিতে আসে। ‘মিনসে বলে কী!’ অল্পক্ষণে তাঁতি তাহার বউকে চিনিতে পারিল।
তাঁতি বলে, ‘আচ্ছা, আমার হইল কী? সারারাত্র নৌকা বাহিলাম, কিন্তু নিজের ঘাট থেকে এক ইঞ্চিও আগাইয়াও যাইতে পারিলাম না!’
বউ আঙুল দিয়া দেখাইয়া বলিল, ‘নৌকা যে বাহিলে, নৌকার দড়ি খুলিয়াছিলে? নৌকা তো খুঁটির সঙ্গে বাঁধা আছে।’
তাঁতি বলিল, ‘তাই তো, বড় ভুল হইয়াছে।