লক্ষ্মী ছেলে গল্প লীলা মজুমদার

শেয়ার করুনঃ

Loading

এক বেজায় জ্যাঠা ছেলে ছিল। যতদিন বাবা বেঁচে ছিলেন, ততদিন সে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে টো টো করে বেড়িয়েছে। শেষটায় যখন বাবা মারা গেলেন, তখন ছেলে ভারি বিপদে পড়ল। কী করে। লেখাপড়া তো আর বেশি জানে না, যে কাজ করে খাবে? তখন সে ভাবল, আমার তো আর আত্মীয়স্বজন কেউ নেই। শুধু আছেন মামা। তিনি আবার আমার উপরে চটা। কী আর করি? তার কাছেই যাই। এই-না,ভেবে সেই দিনই দুপুর বেলা সে মামা বাড়ি গিয়ে উপস্থিত। মামা এদিকে খেয়ে-দেয়ে দিব্যি ঘুম দিচ্ছেন। তার চেঁচামেচিতে তার কাঁচা ঘুম ভেঙে গেল। তিনি চটে বললেন, হতভাগা। কী করতে এসেছিস? কী চাস?

–আজ্ঞে এখানে থাকতে এসেছি।

মামা আর কী করেন বললেন, আচ্ছা থাক। দেখিস বাঁদরামি করিস না।

লক্ষ্মী ছেলে গল্প লীলা মজুমদার Lakkhi chele golpo Leela Majumdar

সেখানে সে বেশ আছে। খায় দায় ঘুম দেয়। একদিন তার মামি বললেন, ওই হাঁড়িতে রসগোল্লা আছে, দেখিস, কেউ যেন খায় না। এই বলে যেই মামি অন্য ঘরে গেছেন, শ্রীমান সব রসগোল্লা গিলেটিলে বসে আছেন।

একটু পরেই মামি ফিরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, কে রসগোল্লা খেয়েছে রে? ছেলে সাধুর মতন বলল, আজ্ঞে আমি।

কেন রে?

খিদে পেয়েছিল বলে।

মামি এসব দেখে হাড়ে হাড়ে চটে গেলেন। ঠিক করলেন, তাকে তাড়াতে হবে। তখন ছেলে ভাবল, তাই তো, মামিকে একটু খুশি করতে হবে।

 

একদিন এক কাণ্ড হয়ে গেল, যাতে মামির মত একেবারে উলটে গেল। তখন বোধ হয় রাত একটা হবে, হঠাৎ মামার ঘুম ভেঙে গিয়েছে। তার মনে হল ঘরের ভিতর কে যেন খচমচ করছে। ভয়ে তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। টাক মাথায় চুল ক-টা খাড়া হয়ে গেল, কপালে ঘাম দেখা দিল।

অতি কষ্টে বললেন, কে রে? তবু কোনো উত্তর না পেয়ে চোর চোর বলে চেঁচিয়ে উঠলেন। অমনি কে জানি হুড়মুড় করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। এমন সময় শুনতে পেলেন বাইরে ছেলেটা বলছে, কে মশাই? না বলে চুরি করতে এসেছেন কেন? বলে এলেই তো পারতেন, তাহলে জিনিস সব বের করে রাখতাম, আপনি শুধু নিয়ে যেতেন।

মামি বললেন, দেখো না গিয়ে কে? মামা লেপের তলায় মাথা ঢুকিয়ে শুয়ে ছিলেন, আস্তে আস্তে উঠে দরজাটা একটু ফাঁক করেই দড়াম করে বন্ধ করে দিয়ে, এক দৌড়ে আবার লেপের তলায় ঢুকলেন। মামি শুনলেন ছেলেটা আবার বলছে, চৌবাচ্চায় নাববেন মশাই? গরমের দিন, আরাম লাগবে। তাছাড়া, সাঁতার শেখা ভালো, যদি কখনো জলে

তারপর ঝপাং করে একটা শব্দ হল। মনে হল, একটা ভারী জিনিস জলে পড়ল! আর ভীষণ জল-ছিটকানোর শব্দ।

মামি আবার ডেকে বললেন, ওগো দেখ না গিয়ে কী হয়েছে। মামা আবার মাথাটা একবারে বের করে তক্ষুনি ঢুকিয়ে নিলেন। তারপর উঠে দরজাটা ফাঁক করে নাকটা বের করে দিলেন, বের করেই আবার ঢুকিয়ে নিয়ে দৌড়ে খাটে উঠলেন গিয়ে। তারপর সেই যে দেয়ালের দিকে গিয়ে শুলেন আর হাজার চ্যাঁচামেচিতেও টু শব্দটি করলেন না।

এদিকে জলের শব্দ থেমে গিয়েছে। ছেলেটা জানি কী একটাতে লাথি মেরে বলল– যান, মশাই! বাড়ি যান! তার পর সব চুপচাপ।

খানিক বাদে আবার ছেলেটি এসে ডাকল, ভয় নাই মামা! বেরিয়ে আসুন। সে ভেগেছে।

হঠাৎ মামার ঘুম ভেঙে গেল, তিনি দৌড়ে বাইরে গিয়ে ছেলেকে ধরে যা আদর! মামিরও রাগ চলে গেছে। কী সাহসী ছেলে! যদি চোরটা কামড়িয়ে দিত বা পা মচকে দিত।

তার পরদিন মামি কতগুলো ভিজে কাপড় দেখে ছেলেটাকে বললেন, ওকী! তোমার কাপড় ভিজল কী করে? সে বলল, কাল রাত্রে চোরটা জল ছিটকিয়ে দিয়েছিল।

মামি বললেন, আহা! যদি নিউমোনিয়া হত!

তখন হতে আর ছেলের আদরের সীমা নেই।

 

0
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

বিদ্যাকল্পে গল্প ও অডিও স্টোরি প্রকাশ করার জন্য আজই যুক্ত হন