বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের অনু গল্প অজান্তে

শেয়ার করুনঃ

সেদিন আপিসে মাইনে পেয়েছি।

বাড়ী ফেরবার পথে ভাবলাম ‘ওর’ জন্যে একটা ‘বডিস্‌’ কিনে নিয়ে যাই। বেচারী অনেক দিন থেকেই বলছে।

এ-দোকান সে-দোকান খুঁ’জে জামা কিনতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। জামাটি কিনে বেরিয়েছি–বৃষ্টিও আরম্ভ হল। কি করি–দাঁড়াতে হল। বৃষ্টিটা একটু ধরতে–জামাটি বগলে ক’রে–ছাতাটি মাথায় দিয়ে যাচ্ছি। বড় রাস্তাটুকু বেশ এলাম–তার পরই গলি, তা-ও অন্ধকার।

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের অনু গল্প অজান্তে

গলিতে ঢুকে অন্যমনস্ক হয়ে ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি–অনেকদিন পরে জা নতুন জামা পেয়ে তার মনে কি আনন্দই না হবে! আজ আমি–

এমন সময় হঠাৎ একটা লোক ঘাড়ে এসে পড়ল। সেও পড়ে গেল, আমিও পড়ে গেলাম–জামাটি কাদায় মাখামাখি হয়ে গেল।

আমি উঠে দেখি–লোকটা তখনও ওঠেনি–ওঠ্‌বার উপক্রম করছে। রাগে আমার সর্বাঙ্গ জ্বলে গেল–মারলাম এক লাথি!

“রাস্তা দেখে চলতে পারো না শুয়ার!”

মারের চোটে সে আবার পড়ে গেল–কিন্তু কোন জবাব করলে না! তাতে আমার আরও রাগ হল–আরও মারতে লাগলাম।

গোলমাল শুনে পাশের বাড়ীর এক দুয়ার খুলে গেল। লণ্ঠন হাতে এক ভদ্রলোক বেরিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন–“ব্যাপার কি মশাই?”

“দেখুন দিকি মশাই–রাস্কেলটা আমার এত টাকার জামাটা মাটি করে দিলে। কাদায় মাখামাখি হয়ে গেছে একেবারে। পথ চলতে জানে না–ঘাড়ে এসে পড়ল–”

“কে–ও? ওঃ–থাক্‌ মশাই মাফ করুন, ওকে আর মারবেন না! ও বেচারা অন্ধ বোবা ভিখারী–এই গলিতেই থাকে–”

তার দিকে চেয়ে দেখি–মারের চোটে সে বেচারা কাঁপছে–গা’ময় কাদা। আর আমার দিকে কাতরমুখে অন্ধদৃষ্টি তুলে হাত দুটি জোড় করে আছে।

 

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments