সাধু ও চলিত ভাষান্তর অথবা রুপান্তরের উদাহরণ
সাধু গদ্য থেকে চলিত গদ্যে ভাষান্তর বা রুপান্তর
(১)
সাধু গদ্য: একদা আমেরিকার এক আদিম নিবাসী ব্যক্তি মৃগয়া করিতে গিয়াছিল। সে সমস্ত দিন পশুর অন্বেষণে বনে বনে ভ্রমণ করিয়া, সায়ংকালে অতিশয় ক্লান্ত হইয়া পড়িল; এবং ক্ষুধায় ও তৃষ্ণায় একান্ত আক্রান্ত হইয়া, এক সন্নিহিত ইউরোপীয়ের বাসস্থানে উপস্থিত হইল।
চলিত গদ্যে: একদিন আমেরিকার এক আদিম নিবাসী ব্যক্তি মৃগয়া করতে গিয়েছিল। সে সারাদিন পশুর খোঁজে বনে বনে ভ্রমণ করে, সন্ধ্যার সময় খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ল ; এবং ক্ষুধায় ও তৃষ্ণায় একান্ত আক্রান্ত হয়ে, এক নিকটবর্তী ইউরোপীয়ের বাসস্থানে উপস্থিত হল।
(২)
সাধু গদ্য: হিম নিবারণ জন্য সম্মুখে আবরণ দেওয়া ছিল। এজন্য নৌকার ভিতর হইতে আরোহীরা এসকল বিষয় কিছুই জানিতে পারে নাই।
চলিত গদ্যে: ঠান্ডা আটকানোর জন্য সামনে ঢাকা দেওয়া ছিল। এজন্য নৌকার ভিতর থেকে যাত্রীরা এসব বিষয় কিছুই জানতে পারেনি।
(৩)
সাধু গদ্য: সমুদ্রে পতিত হইয়াও বারিবিন্দুগণের বিশ্রাম নাই। সূর্যের তেজে উত্তপ্ত হইয়া উর্ধ্বে উড্ডীন হইতেছে।
চলিত গদ্যে: সমুদ্রে পড়েও বারিবিন্দুদের বিশ্রাম নেই। সূর্যের তেজে গরম হয়ে উঁচুতে উড়ে যাচ্ছে।
(৪)
সাধু গদ্য: গণ্ডি পার হইয়া সীতার কী সর্বনাশ হইয়াছিল তাহা রামায়ণে পড়িয়াছিলাম। এইজন্য গণ্ডিটাকে নিতান্ত অবিশ্বাসীর মতো উড়াইয়া দিতে পারিতাম না।
চলিত গদ্যে: গণ্ডি পার হয়ে সীতার কী সর্বনাশ হয়েছিল তা রামায়ণে পড়েছিলাম। এজন্য গণ্ডিটাকে নিতান্ত অবিশ্বাসীর মতো উড়িয়ে দিতে পারতাম না।
(৫)
সাধু গদ্য: বাড়ির কাছে ছাড়ি আইস্তে ফুলজান খালি চোউখ মুছে, আর ফিরি ফিরি চায়। বছির যাবারে চায় না, তাক্ জোর করি ধরি নিয়া গেল্। শাদির পর তাকি তো একদিনও ছাড়ি থাকি নাই। আইজ বাড়িটা হামার সুনসুনটা হয়া গেইছে।
শিষ্ট চলিত গদ্যে: বাড়ির কাছে ছেড়ে আসতে ফুলজান খালি চোখ মোছে, আর ফিরে ফিরে চায়। বছির যেতে চায় না, তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেল। বিয়ের পর তাকে তো একদিনও ছেড়ে থাকিনি। আজ বাড়িটা আমার শূন্য হয়ে গেছে।
চলিত গদ্য থেকে সাধু গদ্যে ভাষান্তর বা রুপান্তর
(১)
চলিত গদ্য: আমার ভাইপো বলাই তার প্রকৃতিতে কেমন করে গাছপালার মূল সুরগুলোই হয়েছে প্রবল। ছেলেবেলা থেকেই চুপচাপ চেয়ে দেখাই তার অভ্যাস, নড়ে চড়ে বেড়ানো নয়।
সাধু গদ্যে: আমার ভ্রাতুষ্পুত্র বলাই তাহার প্রকৃতিতে কেমন করিয়া বৃক্ষরাজির মূল সুরগুলোই হইয়াছে প্রবল। বাল্যকাল হইতেই নিস্তব্ধতায় চাহিয়া দেখাই তাহার অভ্যাস, নড়িয়া বেড়ানো নয়।
(২)
চলিত গদ্য: শংকর ভাবছিল—এই জনহীন অরণ্য অঞ্চলে এত বড়ো একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় যে ঘটে গেল, তা কেউ দেখতেও পেত না যদি তারা না থাকত।
সাধু গদ্যে: শংকর ভাবিতেছিল—এই জনহীন অরণ্য অঞ্চলে এত বৃহৎ একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় যে ঘটিয়া গেল, তাহা কেহ দেখিতেও পাইত না যদি তাহারা না থাকিত।
(৩)
চলিত গদ্য: যে লেখাটি হুজুর পড়ে শোনালেন, তার সব কথাই অতিশয় হক। কিন্তু জাহাজের কাজে বিশেষ করে গোড়ার দিকে যে কী জান-মারা খাটুনি, তাহার খবর কেহই কখনও দিতে পারিবেন না, যে সেই জাহান্নামের ভিতর দিয়া কখনও যায় নাই।
সাধু গদ্যে: যে লেখাটি হুজুর পড়িয়া শোনাইলেন, তাহার সব কথাই অতিশয় হক। কিন্তু জাহাজের কর্মে, বিশেষ করিয়া গোড়ার দিকে যে কী জান-মারা খাটুনি, তাহার খবর কেহই কখনও দিতে পারিবেন না, যে সেই জাহান্নামের ভিতর দিয়া কখনও যায় নাই।