হাঙরের পেটে হিরে (অর্জুন) – সমরেশ মজুমদার
এক
আজ ব্রেকফাস্টের পর অনেকটা সময় গেল শুধু মিটিং করতে। মেজরের মানহাটান ফ্ল্যাটে এসেছিলেন এফবিআই-এর দু’জন বড় অফিসার। লাইটার উদ্ধার করার পর অর্জুনের নিরাপত্তা নিয়ে তারা বেশ চিন্তিত। যে দলটা ওই লাইটার-চক্রান্তে সক্রিয় ছিল, তারা এখন গা ঢাকা দিয়েছে বটে, তবে নিশ্চয় তাদের আক্রোশ থাকবে অর্জুনের ওপর। সেক্ষেত্রে নিউইয়র্কের রাস্তায় যদি ওর কিছু হয়ে যায়, তবে তা হবে আমেরিকান সরকারের লজ্জা। মিস্টার হোপ, অফিসারদের একজন, বারংবার বলছিলেন, অর্জুন যদি আগেভাগে তার ট্যুর-প্রোগ্রামটা ওঁদের জানিয়ে দেয়, তা হলে ওঁরা সবরকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেন।
কথাগুলো শুনতে শুনতে অর্জুনের খুব হাসি পাচ্ছিল। জলপাইগুড়ির বেকার ছেলে নিউইয়র্কে এসে হঠাৎ খাতির পাবে, তা কে জানত। তারও আবার ট্যুর-প্রোগ্রাম। মেজর অবশ্য খুব গম্ভীর মুখে আলোচনা চালাচ্ছেন, কিন্তু সে হাঁপিয়ে উঠছিল। পুলিশের পাহারায় এদেশে থাকার চাইতে দেশে ফিরে যাওয়া অনেক ভাল। দিন-দশেক হল সে আমেরিকায়। এসেছে। নিউইয়র্কটাই ভাল করে দেখা হয়নি। মেজরের হাতের রান্না আর ম্যাকডোনাল্ডের হ্যামবার্গার খেয়ে পেটে ইতিমধ্যেই চড়া পড়ে গেছে। শুধু ওই ম্যাকডোনাল্ডে যে বিশাল মুখবন্ধ কাগজের গ্লাসে মিল্কশেক নামের জমানো মিষ্টি দুধ পাওয়া যায়, তার জন্যেই এদেশে থাকা যায় বলে তার মনে হচ্ছে। তা পুলিশ পাহারায় থাকতে হলে সে ওই মিল্কশেকের লোভও ত্যাগ করতে পারে।
মিস্টার হোপ বললেন, আপনি ইচ্ছে করলে আমাদের দেশের সুন্দর জায়গাগুলো বেড়িয়ে আসতে পারেন। এই ধরুন, লস অ্যাঞ্জেলিস। আপনার আপত্তি না থাকলে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পারি। ওখানে গেলে মনে হয় কোনওরকম ঝামেলার আশঙ্কা কম।
লস অ্যাঞ্জেলিস। নামটা কানে যাওয়ামাত্র মন চনমনে হয়ে উঠল। পরিরা হারিয়ে গেছে নাকি সেখানে? কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হল অফিসাররা অনর্থক চিন্তা করছেন। অমল সোম কখনওই কোনও অপরাধীকে ধরার পর তার ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন না। রবীন্দ্রনাথের একটা লাইন তিনি প্রায়ই বলতেন, অন্যায়ের ছুরির কোনও বাঁট নেই। যে আঘাত করে, সে নিজেও রক্তাক্ত হয়।
অফিসাররা ওঠার আগে ওদের চিন্তা করতে বললেন। মিস্টার হোপ অর্জুনকে একটা কার্ড দিয়ে গেলেন। সেই কার্ডে লেখা রয়েছে, এই ভদ্রলোককে সাহায্য করা মানে, তা আমেরিকান সরকারকে সাহায্য করার সামিল হবে। বললেন, কখনও বিপদে পড়লে যে-কোনও পুলিশ অফিসারকে ওটা দেখালেই কাজ হবে।
ওঁরা বিদায় নেওয়ার পর মেজর সোজা উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাত ওপরে ছুঁড়ে আলস্য ভাঙলেন। তারপর একটা কোকাকোলার টিন ফুটো করে পুরোটা গলায় ঢাললেন। অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনার খিদে পায়নি?
পেয়েছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে বকর বকর করতে করতে। ভিজিয়ে নিলাম। আঃ। এবার বলো তো কী রাধি?
অর্জুন আতঙ্কিত হল, রান্নার কী দরকার। চলুন না বাইরে গিয়ে খাই।
ম্যাকডোলান্ডে? মিল্কশেক? মেজর গলা ফাটিয়ে হাসলেন, কত ক্যালোরি আছে জানো ওতে! রোজ খেলে পিপে হয়ে যাবে দু’দিনে।
অর্জুনের মেজাজ খারাপ হল। যেন মিল্কশেক না-খেয়ে উনি মোটা হচ্ছেন না। মেজর বললেন, আমি হেনরিকে আসতে বলেছি এখানে। ওকে লাঞ্চ খাওয়াবে।
কে হেনরি?
হেনরি! চোখ বড় করলেন মেজর, আমার বন্ধু। আমার অভিযানের পার্টনার। ওর জন্যে কালিম্পং থেকে সেই রেয়ার পপিটা এনেছি। তিরিশ দিন আমি আর হেনরি আমাজনে ডিঙিনৌকোতে ছিলাম, আল্পসের তুষারঝড়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম সাতদিন, হেনরি আমাকে খুঁজে বার করেছিল। হেনরি ডিমক। এক নম্বরের পাগল। কিন্তু ও তো লেট করে না। দাঁড়াও দেখছি। মেজর উঠে টেলিফোনের রিসিভার হাতে নিয়ে ফিরে এলেন। তার ছাড়াই ঘরের যে-কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে এখানে ফোন করা যায়।
হাই হেনরি! পাজি পা-ঝাড়া! আমার এখানে লাঞ্চ খেতে আসবে বলে ওখানে কোন রাজকার্য করছ।… কী?… কথা বলতে পারছ না? এত বড় আস্পর্দা?… কী?… ওয়াচ করছ? ছাইমাথা কিছুই বুঝতে পারছি না।… চলে আসব? বয়ে গেছে আমার। রাবিশ’ টেলিফোন নামিয়ে রেখে নিজের মনেই মেজর চিৎকার করে উঠলেন, বন্ধু না ঘেঁচু! সেবার গ্লেসিয়ার থেকে যখন পড়ে গিয়েছিল, তখন আমি না টেনে তুললে আজকে ওয়াচ করা বেরিয়ে যেত!
অর্জুন অবাক হয়ে শুনছিল। মেজরকে সত্যি খুব রাগী দেখাচ্ছে। আঙুলের ডগায় দাড়ি চুলকোচ্ছেন আর গজর গজর করছেন। সে নিচু গলায় জিজ্ঞাসা করল, উনি কী ওয়াচ করছেন?
হিরে। কাচ ভেবে কিনেছিল। মেজর মুখ বিকৃত করলেন।
মানে? অর্জুন হতভম্ব। এতদিন শুনে এসেছে লোকে হিরে ভেবে কাচ কেনে, আর এ যে শুনছে উলটো।
মেজর আর একটা কোকাকোলা গলায় ঢাললেন। অকৃতজ্ঞ, বেইমান! এত বড় একটা এক্সপেরিমেন্ট আমাকে বাদ দিয়ে করছে। অথচ আমার প্রতিটি ব্যাপারে আমি ওকে আগেভাগে খবর দিই। লেটস গো! চলো তো, মুখের ওপর কথাগুলো শুনিয়ে আসি। এরকম বন্ধু দরকার নেই আমার।
মেজর লাফিয়ে উঠতেই টেলিফোন বেজে উঠল। ব্যাটা বোধহয় আমাকে চাইছে। বলবে, বাড়িতে নেই, কথা বলতে চাই না!
অগত্যা অর্জুন রিসিভার কানে তুলল, হ্যালো?
কে? তৃতীয় পাণ্ডব? কেমন আছ? বিসাহেবের গলা।
অর্জুন অবাক, ভাল। আপনি কেমন? কোত্থেকে বলছেন?
হাসপাতাল থেকে। বেডে শুয়েই এদেশে টেলিফোন করা যায়।
আপনি ঠিক আছেন?
না হে। এ বন্দিদশা আর সহ্য হচ্ছে না। কালিম্পং বড় টানছে আমাকে। ডাক্তার বলছে আমি ভাল হব। কবে হব কে জানে! তোমার কোনও অসুবিধে হচ্ছে না তো? বিদেশ বিভুঁই! বিষ্ঠুসাহেবর গলার স্বর অর্জুনের মন জুড়িয়ে দিল।
বলছেটা কে? মেজর এগিয়ে এলেন।
বিষ্টসাহেব! অর্জুন মেজরকে রিসিভারটা দিল।
অ। শুনুন। হাসপাতালে শুয়ে বকর বকর করাটা ঠিক নয়।… কী বললেন?…না, না, আমার মেজাজ ঠিক আছে।… অর্জুনকে ভাল-মন্দ খাওয়াচ্ছি কিনা? আশ্চর্য। আপনি আমাকে কী ভাবেন বলুন তো? কাল ডিনারে চিংড়ি মাছের সসপ্যান চচ্চড়ি করেছিলাম তা জানেন?… যাব দেখতে আপনাকে।–নো, নো, নো এক্সপিডিশন!
মানহাটান থেকে বেরিয়ে সোজা টাইম স্কোয়ারের দিকে হনহনিয়ে হাঁটছিলেন মেজর, পিছনে অর্জুন। কোথায় যাচ্ছে, তা সে জানে না। খিদেয় পেট চোর্চো করছে। টাইম স্কোয়ারটা ঠিক কলকাতার মতো। ফুটপাথে হকার, চিৎকার চেঁচামেচি। বেশিরভাগ নিগ্রো এ-তল্লাটে। সে দ্রুত পা চালিয়ে মেজরকে জিজ্ঞেস করল, হার্লেমটা কতদূর?
মেজর থমকে দাঁড়ালেন, কেন? সেখানে কী দরকার?
চার্লসের খোঁজে গেলে হয়। চার্লস বলেছিল সে হার্লেমে থাকে।
অ। দ্যাট গ্রেট থিফ। জোন্স অ্যান্ড জোন্সের পুরস্কারের টাকাটার শেয়ার নিয়ে ব্যাটা হাওয়া হয়ে গেছে না? কিন্তু হার্লেম পরে হবে। ডেঞ্জারাস জায়গা।
মেজর কেন ডেঞ্জারাস’ বললেন, তা জানে অর্জুন। হার্লেম হল নিউইয়র্কের একটা অঞ্চল, যেখানে নিগ্রোরা থাকে। সাদা চামড়ার লোকজন বলে, সেখানে নাকি পৃথিবীর সবরকমের অপরাধ নিত্য ঘটছে। খুন-জখম তো জলভাত। সাদা চামড়ার মানুষ সহজে যায় না সেখানে। লাইটার উদ্ধারে যার সাহায্য পেয়েছি, সেই চার্লস অবশ্য তাকে বলেছে, এসব সাদাদের বানানো গল্প। তিলকে তাল করা।
ভিড় ছাড়িয়ে দু’পা এগোতেই ডাক ভেসে এল, হেই মিস্টার।
মেজর দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। অর্জুন দেখল, ওপাশের রেলিং-এ ঠেস দিয়ে তিনজন প্রৌঢ় দাঁড়িয়ে। দু’জন সাদা, একজন কালো। তিনজনের শরীরেই ময়লা সুট। মুখে না-কামানো দাড়ি। বয়স্কতম যিনি, তিনি কালো প্রৌঢ়টিকে দেখিয়ে মেজরকে বললেন, হোয়াই ডোঞ্চ হেল্প ইয়োর ব্রাদার? ওকে তিনটে ডলার দাও।
সঙ্গে সঙ্গে মেজর পা চালালেন, চলে এসো। ব্যাটারা ভিখিরি।
ভিখিরি? অর্জুন হা হয়ে গেল। এ কীরকম ভিক্ষের ধরন! ওরা চলে যাচ্ছে দেখে তিনজনেই তারস্বরে গালাগাল দিতে লাগল। যার একটা শব্দ কানে গেলে নিজেকে সামলানো দায় হয়, তা শুনেও মেজর জায়গাটা পেরোতে পেরোতে বললেন, মেরে ব্যাটাদের ক্যালেন্ডার করে দিতে পারতাম। কিন্তু কাকে মারব? কুকুরের কাজ কুকুর করেছে, কামড় দিয়েছে পায়। একটু থমকালেন তিনি, তারপরের লাইনটা যেন কী হে?
অর্জুন জবাব দিল না। তার নিজেরই রাগ হচ্ছিল। ভিক্ষে না পেয়ে যে দেশের ভিখিরিরা অমন গালাগাল করে, তাদের ক্ষমা করাটা কখনওই উচিত নয়, মানুষের শোভা না পেলেও।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন একশো পয়সায় এক টাকা। অবশ্যই সেই সেই দেশের মুদ্রায়। এতে হিসেব করতে সুবিধে হয়। একশো সেন্টে এক ডলার। নব্বই সেন্ট খরচ করলে পাতাল রেলের যে-কোনও দুরত্বে যাওয়া যায়। জীবনে প্রথমবার পাতালরেলে চাপল অর্জুন। আসনের পাশেই স্টেশনের নাম লেখা আছে। যে স্টেশন আসছে তার পাশে আলো জ্বলে উঠে বুঝিয়ে দিচ্ছে। ওরা চলে এল সোজা কুইন্সে। মানহাটান থেকেও পাতালরেলে চেপে এখানে আসা যেত, ম্যাপ দেখে বুঝতে পারল অর্জুন। মেজর কেন টাইম স্কোয়ার পর্যন্ত হাঁটলেন, তা প্রথমে ধরতে না পারলেও একটু একটু অনুমান করছে। এই হাঁটার জন্যেই সম্ভবত মেজরের মেজাজটা একটু ঠান্ডা হয়েছে।
মাটির ওপরে উঠে এসে মেজর বললেন, সামনেই ম্যাকডোনাল্ড। যাও, গিয়ে খেয়ে এসো। ওহো, না, চলো, আমিও সঙ্গে যাই। তোমার নিরাপত্তার প্রয়োজন।
অর্জুন অনেক কষ্টে হাসি চাপল, আপনি খাবেন না?
না। ইচ্ছে নেই। তুমি ভাবতে পারো অর্জুন, লোকটা পরশুদিন টাইম স্কোয়ার থেকে কাচ কিনেছে তিরিশ সেন্টে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে দেখেছে, সেই কাচ দিয়ে আলো বের হচ্ছে। পরদিনই জহুরিকে দেখিয়ে জেনেছে ওটা বিরল শ্রেণির হিরে। জহুরি দাম দিতে চেয়েছিল আট হাজার ডলার। ও দেয়নি, কারণ হিরেটা ঘোরালে নাকি নানান রকমের আলো বের হচ্ছে। অথচ এসব আমায় জানায়নি। করুণ মুখে বললেন মেজর।
হয়তো জানাতেন। ব্যাপারটায় এত মগ্ন হয়ে পড়েছিলেন…’।
বলছ? মেজরকে অন্যমনস্ক দেখাল একটু, কিন্তু তারপরেই দু’প্লেট মুরগির মাংসভাজা, দুটো হ্যামবার্গার আর দুটো বড় সাইজের মিল্কশেক কিনে ম্যাকডোনাল্ডের গোল টেবিলে রেখে বললেন, পেট পুরে খেয়ে নেওয়াই ভাল। হেনরিটা হাড়কিপটে। কফি ছাড়া কিছু খাওয়ায় না।
ম্যাকডোনাল্ড কোম্পানি সারাদেশে, দেশের বাইরেও সস্তায় ভাল খাবার পরিবেশন করার জন্যে ছিমছাম অথচ সুন্দর রেস্তোরাঁ তৈরি করেছে। কাউন্টারের ওপাশে যন্ত্রপাতির মাধ্যমে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা সাদা অ্যাপ্রনে শরীর মুড়ে হাসিমুখে খাবার পরিবেশন করে। দেওয়ালে টাঙানো বোর্ডের মেনু দেখে অর্ডার দিয়ে নিজেই নিয়ে বসে যাও টেবিলে।
বাইরে বেশ ঠান্ডা, ঝোড়ো বাতাস বইছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। এ তল্লাটে কেউ সচরাচর ফুটপাথে হাঁটে না। গাড়ির ভিড় লেগেই আছে। আরাম করে খেতে খেতে অর্জুন কাঁচের দেওয়াল দিয়ে কুইন্সের রাস্তা দেখছিল। মেজর চোখ বন্ধ করে খেয়ে যাচ্ছেন। বিশাল চেহারার এই মানুষটিকে শিশুর মতো দেখাচ্ছিল। অর্জুন দেখল, একটা গাড়ি এসে ম্যাকডোনাল্ডের পার্কিং লটে থামল। এখানে কত সুন্দর সুন্দর গাড়ি দেখা যায়। দেশটা বড়লোকের কিন্তু অহংকার দেখানোর বালাই বিশেষ নেই। সেদিন সে একটা কাণ্ড করেছিল। এবার আসবার সময় মেজর একটা পল্লিসংগীতের রেকর্ড কিনে এনেছিলেন। একদিন মেজর বাড়িতে ছিলেন না, সে মনের সুখে জানলা খুলে গানটা জোর ভমে শুনছিল। পশ্চিমবাংলার অনেক দূরে বসে বাংলাদেশের গ্রামের ছবি যখন মনের ক্যানভাসে আঁকা হচ্ছে, তখন বেল বেজেছিল। দরজা খুলতেই সে অবাক হয়ে দেখেছিল, একজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে। গম্ভীর মুখে অফিসার জিজ্ঞেস করেছিল, রেকর্ডটা কে বাজাচ্ছে?
বাংলা গান এদেশে বাজানো অন্যায় কি না বুঝতে না পেরে সে বলেছিল, আমি।
তা হলে আমার সাহায্য তোমাকে নিতে হয়!
সাহায্য?
হ্যাঁ। আমার মনে হচ্ছে তোমার কানে কোনও গোলমাল হয়েছে। কাছেই হাসপাতাল আছে। চলো সেখানে।
আমার কানে তো কোনও গোলমাল নেই! সে অবাক হয়েছিল আরও।
সে কী! গোলমাল নেই, তবু অত জোরে গান বাজাচ্ছ? তুমি দেখছি পাড়াসুদ্ধ লোকের কান খারাপ করে ছাড়বে। কবে এসেছ এ-দেশে?
অর্জুন দিনটা বলার পর অফিসার ঘরে ঢুকে জানলা বন্ধ করে বললেন, তোমার পাশের ফ্ল্যাটে একজন হার্টের রুগি আছেন। যখনই গান বাজাবে, তার কথা ভাববে। ভল্মটা কমিয়ে দিলে তো শুনতে অসুবিধে হয় না।
অফিসার চলে গেলে সে অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসেছিল। সে বইতে পড়েছে বিখ্যাত লেখক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি টেনিদার জনক, পাড়ার ছেলেদের মাইকের অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে লিখেছিলেন যে, তিনি আর বাঁচতে পারবেন না। আমাদের দেশে পুজোপার্বণে যখন মাইক চালানো হয়, তখন কোনও পুলিশ তো আসে না। মানুষই বা প্রতিবেশীর কথা কখন ভাবে?
অর্জুন দেখল লোক দুটো কথা বলতে বলতে ম্যাকডোনাল্ডে ঢুকছে। তাদের মধ্যে একজন এদিকে তাকিয়েই খুব অবাক হল। দ্রুত পায়ে কাছে ছুটে এসে চিৎকার করে উঠল, অ্যাই মেজর। তুমি, তুমি এখানে?
