সুকুমার রায়ের লেখা ছোট গল্প ফড়িং

শেয়ার করুনঃ

Loading

ফড়িং গল্প - সুকুমার রায় Bengali Story Foring Golpo Shukumar Ray

 

ফড়িং পাওয়া যায় না, এমন দেশ খুব কমই আছে। যে-দেশে লতাপাতা আছে আর সবুজ মাঠ আছে, সে দেশেই ফড়িং পাওয়া যাবে। নানান দেশ নানানরকমের ফড়িং, তাদের রং এবং চেহারাও নানানরকমের, কিন্তু একটি বিষয়ে সবারই মধ্যে খুব মিল দেখা যায়; সেটি হচ্ছে লাফ দিয়ে চলা। এই বিদ্যায় ফড়িঙের একটু বিশেষরকম বাহাদুরি দেখা যায়, কারণ অন্যান্য অনেক পোকার তুলনায় ফড়িঙের চেহারাটি বড়ই বলতে হবে। আরও অনেক বড় পোকা আছে, যেমন আরশুলা, যারা একটু-আধটু লাফাতে পারে; কিন্তু তাদের লাফানির চাইতে উড়বার ঝোঁকটাই বেশি। ফড়িঙের যদিও ডানা আছে, কিন্তু সেটা সে ঠিক উড়বার জন্য—অর্থাৎ বাতাস ঠেলে উঠবার জন্য—ব্যবহার করে না। তাতে কেবল লাফ দিবার সময় বাতাসে ভর করে শরীরটাকে কিছু হালকা করার সুবিধা হয় মাত্র। ফড়িঙের শরীরটা দেখলেই বোঝা যায় যে, ঐরকম লাফ দিবার আয়োজন করেই তাকে গড়া হয়েছে। তার শরীরের ভিতরটা বাতাসে পোরা বললেও হয়—অন্য কোন পোকার মধ্যে এতগুলা ফাঁপা নল প্রায়ই দেখা যায় না। শরীরটা হালকা হওয়ায় যে লাফাবার সুবিধা হয় তা সহজেই বুঝতে পার। তার উপর ফড়িঙের পা দুটিতেও একটু বিশেষরকমের কেরামতি আছে। পায়ের আগাটি যেন বঁড়শির মতো বাঁকান।

 

লাফাবার সময় সে ঐ বঁড়শি দিয়ে সুবিধামত গাছের ডালপালা কিছু একটা বেশ করে আঁকড়িয়ে ধরে। তারপর পা-টাকে জোর করে গুটিয়ে হঠাৎ টান ছেড়ে দেয়, আর সেইসঙ্গে সমস্ত শরীরটা ধনুকের ছিলার মতো ছিট্‌কিয়ে যায়। এরকম সাংঘাতিকভাবে লাফাতে গিয়ে যাতে হাত পা জখম না হয়, তার জন্যও ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম ব্যবস্থা, তার ডানা দুটি। লাফ দিয়ে পড়বার সময় ঐ ডানার উপর ভর দিয়ে সে লাফানির ঝুঁকিটা সামলিয়ে নেয়। তারপর সামনের পা-গুলোর আগায় যে পুঁটুলি রয়েছে ঐগুলোতে পড়বার চোট্‌ কমিয়ে দেয়। ফড়িঙের ইংরাজি নামটিও ঐ লাফানির পরিচয় পাওয়া যায়। ( Grass hopper অর্থাৎ “যিনি ঘাসের উপর লাফিয়ে বেড়ান”)।

 

মাঠের মধ্যে ফড়িঙের ‘চির্‌-চির্‌’ শব্দ অনেক সময়ে খুব স্পষ্ট শোনা যায়। এই আওয়াজটি তার গলা থেকে বেরোয় না—তার যন্ত্রটি থাকে ডানার মধ্যে। ডানা দুটির গোড়ার ‘উকা’র মতো খড়্‌খড়ে দুটি সরু তাঁতের উপর একটি পাতলা ‘চামড়া’র ছাউনি। ঐ তাঁতের ঘষাঘষিতে আওয়াজ হয় আর ওই পাতলা চামড়াটিতে সেই আওয়াজটাকে বাড়িয়ে তোলে। এইরকম আওয়াজ করে তাদের কি লাভ হয়? একটা লাভ হয় এই যে তারা এমনি করে পরস্পরকে ডাকতে পারে। ভাল খাবার পেলে বা খুব ফুর্তি হলেও তারা এইরকম করে ডাকে; ভয় পেলে চুপ করে থাকে। আশ্চর্য এই যে, স্ত্রী ফড়িংদের আওয়াজ নাই; কিন্তু তাদের ‘কান’ খুব ভাল।

 

‘কান’ বললাম বটে, কিন্তু একটা ফড়িং ধরে যদি তার কান খুঁজতে যাও, হয়ত খুঁজেই পাবে না; কারণ কানটি থাকে হার হাঁটুর কাছে না হয় পিঠের উপর! কানেরও আবার নানান রকম বেরকম আছে। কোনটা একেবারে খোলা দুটো পাতলা চামড়ার খোলা, কোনটা গর্তের মধ্যে ঢুকিয়ে বসান—কোনটার মুখে রীতিমত ঢাকনি দেওয়া।

 

0
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

বিদ্যাকল্পে গল্প ও অডিও স্টোরি প্রকাশ করার জন্য আজই যুক্ত হন