কঙ্কগড়ের কঙ্কাল (কিশোর কর্নেল) – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
এক
কর্নেল নীলাদ্রি সরকার খুব মন দিয়ে কী একটা বই পড়ছিলেন। ছেঁড়াখোঁড়া মলাট। পোকায় কাটা হলদে পাতা। নিশ্চয় কোনও পুরোনো দুষ্প্রাপ্য বই। কিন্তু শেষ মার্চের এই সুন্দর সকালবেলাটা গম্ভীর মুখে বই পড়ে নষ্ট করার মানে হয়? দাঁতে কামড়ানো চুরুট কখন নিভে গেছে এবং সাদা দাড়িতে ছাইয়ের টুকরো আটকে আছে। একটু কেশে ওঁর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলাম। ধ্যান ভাঙল না। আমার উলটো দিকে সোফায় বসে প্রাইভেট ডিটেকটিভ হালদারমশাই উশখুশ করছিলেন। একটিপ নস্যি নাকে গুঁজে আনমনে বললেন, যাই গিয়া!
এতক্ষণে কর্নেল বই বন্ধ করে বলে উঠলেন, হালদারমশাই কি প্রেতাত্মায় বিশ্বাস করেন?
হালদারমশাইয়ের দুই চোখ গুলি-গুলি হয়ে উঠল। জোরে মাথা নেড়ে বললেন, নাহ। ক্যান?
কর্নেল আমার দিকে তাকালেন। জয়ন্ত তুমি?
নাহ।
কর্নেল নিভে যাওয়া চুরুটটি একবার জ্বেলে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, সমস্যা হল, আমাকেও কেউ এই প্রশ্ন করলে আমিও সোজা নাহ বলে দিতাম। কিন্তু অসংখ্য মানুষ প্রেতাত্মায় বিশ্বাস করে। তাদের সংখ্যাই পৃথিবীতে বেশি। কাজেই তারা এই বিশ্বাসের বশে এমন সাংঘাতিক-সাংঘাতিক সব কাণ্ড করে বসে কহতব্য নয়।
হালদারমশাই উত্তেজিত ভাবে বললেন, কেডা কী করল?
কর্নেল হাসলেন। করল নয়, করেছিল। ভেবে দেখুন হালদারমশাই। ১০৮টা নরবলি।
কন কী। পুলিশ তারে ধরে নাই?
পুলিশ এ-রহস্য ভেদ করতে পারেনি। যিনি পেরেছিলেন, তিনিই এই বইটা লিখে গেছেন। কর্নেল বইটার পাতা খুলে দেখালেন। তান্ত্রিক আদিনাথের জীবন এবং সাধনা। নামটা আমার পছন্দ। লেখকের নাম হরনাথ শাস্ত্রী। প্রায় নব্বই বছর আগে লেখা এবং ছাপা বই। আদিনাথ ছিলেন হরনাথের জ্যাঠামশাই।
বললাম, ওই তান্ত্রিক ভদ্রলোক ১০৮টা নরবলি দিয়েছিলেন?
তা-ই তো লিখেছেন হরনাথ। তান্ত্রিক ভদ্রলোকের বিশ্বাস ছিল, ওই ১০৮টা প্রেতাত্মা তাঁর চ্যালা হবে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। একদিন ভোরবেলা স্বয়ং তান্ত্রিককেই মন্দিরের হাড়িকাঠের কাছে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। মুণ্ডহীন ধড়। রক্তে-রক্তে ছয়লাপ! নিজেই বলি হয়ে গেলেন।
হালদারমশাইয়ের গোঁফের ডগা তিরতির করে কাঁপছিল। বললেন, মুণ্ড গেল কই?
কর্নেল হেলান দিয়ে চোখ বুজে বললেন, মুন্ডু পাওয়া যায়নি। অগত্যা ধড়টা শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হরনাথ লিখেছেন, দেড় মণ ঘি আর আট মণ কাঠের আগুনেও তান্ত্রিকের ধড় একটুও পোড়েনি। শেষে লোক জানাজানি এবং পুলিশের ভয়ে মুণ্ডকাটা ধড়ে পাথর বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। অদ্ভুত ব্যাপার, পরদিন ধড়টা জলে ভেসে ওঠে। নদীতে স্রোত ছিল অথচ ধড়টা দিব্যি স্থির ভাসছে।
বললাম, হরনাথবাবু দেখেছিলেন এসব ঘটনা?
তখন ওঁর বয়স মাত্র পনেরো বছর। কাজেই স্মৃতি থেকে লেখা। কিন্তু তারপর উনি যা লিখেছেন, তা আরও অদ্ভুত। বছর কুড়ি পরে হরনাথবাবু নাকি স্বপ্নে তান্ত্রিক জ্যাঠামশাইকে দেখতে পান। তান্ত্রিক ভদ্রলোক ভাইপোকে বলেন, কেউ যদি আমার মুণ্ডুটা ধড়ের সঙ্গে জোড়া দেয়, আমি আবার সশরীরে ফিরে আসব।
ততদিনে দুটোই তো কঙ্কাল। নিছক হাড় আর খুলি।
হালদারমশাই সায় দিয়ে বলেন, হঃ! স্কেলিটন অ্যান্ড স্কাল!
কর্নেল চোখ খুলে সোজা হয়ে বসলেন। কিন্তু খুলি কোথায় পোঁতা আছে হরনাথ জানতেন না। কেউই জানত না। উনি কবন্ধ মড়াটা এনে সিন্দুকে রেখে দিয়েছিলেন। তারপর খুলির খোঁজে হন্যে হচ্ছিলেন। হঠাৎ আবার একদিন আদিনাথ স্বপ্নে দেখা দিয়ে একটা মজার ধাঁধা বললেন। ওতেই নাকি খুলির সূত্র লুকনো আছে।
আটঘাট বাঁধা
বার পনেরো চাঁদা
বুড়ো শিবের শূলে
আমার মাথা ছুঁলে
ও হ্রীং ক্লীং ফট
কে ছাড়াবে জট৷
অবাক হয়ে বললাম, আপনার মুখস্থ হয়ে গেছে দেখছি!
কর্নেল হাসলেন। সহজে মুখস্থ হবে বলেই তো আগের দিনের লোকেরা ছড়া বাঁধত। মাস্টারমশাইরা অনেক ফরমুলা ছড়ার আকারে ছাত্রদের শেখাতেন।
হালদারমশাই উৎসাহে মাথা নেড়ে বললেন, হঃ। একখান শিখছিলাম :
ইফ যদি ইজ হয়
বাট কিন্তু নট নয়…
গোয়েন্দা ভদ্রলোক আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, ওঁকে ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বললাম, তা এই উদ্ভট বই নিয়ে মাথা ঘামানোর কারণ কী কর্নেল?
কর্নেল গম্ভীর হয়ে দাড়ির ছাই ঝাড়লেন। তারপর অভ্যাসমতো চওড়া টাকে হাত বুলিয়ে বললেন, হরনাথ এই ধাঁধার জট ছাড়াতে পারেননি। ওঁর বংশধররাও পারেননি। কিন্তু সম্প্রতি যা সব ঘটছে বা ঘটেছে, তা থেকে এলাকার লোকদের বিশ্বাস জন্মেছে, তান্ত্রিক আদিনাথের সশরীরে পুনরাবির্ভাব ঘটেছে। প্রথমত, সিন্দুকের কঙ্কালটা কে বা কারা চুরি করেছে। দ্বিতীয়ত, দেবী চণ্ডিকার পোড়ো মন্দিরের সামনে পর-পর দুটো নরবলি দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, রামু ধোপা সন্ধ্যার মুখে ঝিল থেকে কাপড়ের বোঁচকা গাধার পিঠে চাপিয়ে বাড়ি ফিরছিল। সবে চাঁদের আলো ফুটেছে, একটা কঙ্কাল ওর সামনে দাঁড়িয়ে হুংকার দিয়ে বলেন, আমি সেই আদিনাথ। রামু গোঁ গোঁ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
হালদারমশাই বলে উঠলেন, তারপর? তারপর?
রামু এখন পাগল হয়ে গেছে। কীসব অদ্ভুত কথাবার্তা বলছে। অবশ্য মাঝে-মাঝে ওর আচরণ কিছুক্ষণ সুস্থ মানুষের মতো। কর্নেল বইটা ড্রয়ারে ঢুকিয়ে বললেন, গাধাটাও পাগল হয়ে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধরা দেয় না।
হালদারমশাই বললেন, বাট হোয়ার ইজ দ্যাট প্লেস কর্নেলস্যার?
কঙ্কগড়। আপনি কি যেতে চান সেখানে?
নাহ। এমনি জিগাই। গোয়েন্দা ভদ্রলোক কাঁচুমাচু মুখে হাসলেন। কিন্তু কঙ্কগড় নামটা চেনা চেনা লাগছে। কঙ্কগড়… কঙ্কগড়
কর্নেল বললেন, কঙ্কগড় বর্ধমান-বিহার সীমান্তে। দুর্গাপুর থেকেও যাওয়া যায়।
হালদারমশাই ব্যস্তভাবে একটিপ নস্যি নিলেন। ছড়াটা কী কইলেন য্যান কর্নেলস্যার?
কর্নেল আমার দিকে একবার তাকিয়ে একটুকরো কাগজে ছড়াটা লিখে ওঁকে দিলেন। মুখে দুষ্টু-দুষ্টু হাসি। হালদারমশাই ছড়াটা মুখস্থ করার চেষ্টায় ছিলেন। আমাদের চোখে-চোখে কৌতুক লক্ষ্য করলেন না।
ষষ্ঠীচরণ আর এক প্রস্থ কফি আনল। কফির পেয়ালা তুলে বললাম, হালদারমশাই। বোঝা যাচ্ছে এই রহস্যের কেস কর্নেল নিজের হাতে নিয়েছেন। আপনি বরং ওঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট হতে পারেন।
হালদারমশাই বাড়তি দুধমেশানো ওঁর স্পেশাল কফিতে চুমুক দিয়ে খি-খি করে হেসে উঠলেন। ওঁর এই হাসিটি একেবারে শিশুসুলভ। কে বলে উনি একসময় দুঁদে পুলিশ ইনস্পেকটার ছিলেন এবং ওঁর দাপটে যত দাগি অপরাধী তটস্থ হয়ে থাকত? চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলেছেন। মাঝে-মাঝে কর্নেলের কাছে আড্ডা দিতে, আবার কখন কোনও কেস পেলে ওঁর ভাষায় ‘কর্নেলস্যারের লগে কনসাল্ট’ করতেও আসেন।
বললাম, হাসছেন কেন হালদারমশাই?
হালদারমশাই আরও হেসে বললেন, কর্নেলস্যার কইলেন গাধাটা পাগল হইয়া গেছে। গাধা..খি খি খি… গাধা ইজ গাধা। অ্যাস! দুইখান এস।
এই সময় ডোরবেল বাজল। কর্নেল মুচকি হেসে বলেন, সম্ভবত দুইখান এস এলেন। নাহ। অ্যাস নয়। শশিনাথ শাস্ত্রী।
বললাম, নাম শুনে মনে হচ্ছে যজমেনে বামুন। পাণ্ডাপুরুতঠাকুর সম্ভবত। নাকি সংস্কৃতের পণ্ডিতমশাই?
কিন্তু ষষ্ঠীচরণ যাকে নিয়ে এল, তাকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমার বয়সি একজন যুবক। স্মার্ট, ঝকঝকে চেহারা। পরনে জিনস, ব্যাগি শার্ট, কাঁধে ঝোলানো কিটব্যাগ। কর্নেলকেও একটু অবাক দেখাচ্ছিল। বললেন, এসো দিপু! তোমার বাবা এলেন না যে?
যুবকটি বসে কবজি তুলে ঘড়ি দেখে নিয়ে বলল, মর্নিংয়ে হঠাৎ ট্রাংককল এল। একটা মিসহ্যাপ হয়েছে বাড়িতে। বাবা আমাকে আপনার সঙ্গে দেখা করতে বলে চলে গেলেন। ন-টা পাঁচে একটা ট্রেন আছে।
কী মিসহাপ?
আবার কী? একটা ডেডবডি। ভজুয়া নামে আমাদের একজন কাজের লোক ছিল। মন্দিরের সামনে তার বডি পাওয়া গেছে আজ ভোরে। একই অবস্থায়।
হালদারমশাই নড়ে বসেছিলেন। ফ্যাঁসফেসে গলায় বললেন, নরবলি?
কর্নেল নির্বিকার মুখে বললেন, তোমার সঙ্গে এঁদের আলাপ করিয়ে দিই দিপু। হালদারমশাই! এর নাম দীপক ভট্টাচার্য। হরনাথবাবুর কথা আপনাদের বলেছি। তাঁর পৌত্র। দিপু, ইনি প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে. কে. হালদার। আর– জয়ন্ত চৌধুরী। দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার রিপোর্টার।
দীপক আমাদের নমস্কার করল। তারপর হালদারমশাইকে বলল, আপনি প্রাইভেট ডিটেকটিভ?
হালদারমশাই খুশিমুখে বললেন, ইয়েস।
কর্নেল বললেন, দিপু। বরং এক কাজ করো। তুমি হালদারমশাইকে সঙ্গে নিয়ে যাও। আমি যথাসময়ে পৌঁছোব।
দীপক বলল, দুপুরে সাড়ে বারোটায় একটা ট্রেন আছে। বাবা আপনাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে বলেছেন।
চিন্তার কিছু নেই। আমি যাব’খন। আর শোনো, আমার থাকার ব্যবস্থা তোমাদের করতে হবে না।
সে কী! বাবা আমাকে
নাহ। আমি সরাসরি তোমাদের ওখানে উঠলে আমার কাজের অসুবিধে হবে। তুমি বরং হালদারমশাইকে সঙ্গে নিয়ে যাও। তবে উনি যে প্রাইভেট ডিটেকটিভ এটা যেন কাউকে বোলো না।
হালদারমশাই সহাস্যে বললেন, আমারে মামা কইবেন।
কর্নেল অট্টহাসি হাসলেন। দিপুরা রাঢ়ের ঘটি। ওর মামা পূর্ববঙ্গীয় ভাষায় কথা বললে লোকের সন্দেহ হবে। আপনি তো দিব্যি স্ট্যান্ডার্ড বাংলায় কথা বলতে পারেন।
তা পারি। বলে হালদারমশাই আর একটিপ নস্যি নিলেন।
বললাম, আসলে উত্তেজনার সময় হালদারমশাইয়ের মাতৃভাষা এসে যায়।
কর্নেল বললেন, তা যা-ই বলো জয়ন্ত, পূর্ববঙ্গীয় ভাষার ওজন আছে। উত্তেজনাকে যথাযথভাবে প্রকাশ করতে স্ট্যান্ডার্ড বাংলা একেবারে অটল। তাই দ্যাখো না, উত্তেজনার সময় যাঁরা পূর্ববঙ্গীয় ভাষা জানেন না, তারা হিন্দি বা ইংরেজি বলেন।
হালদারমশাই সটান উঠে দাঁড়ালেন। ইউ আর হানড্রেড পারসেন্ট কারেক্ট কর্নেলস্যার! বলে পকেট থেকে নেমকার্ড বের করে দীপককে দিলেন। আমি হাওড়া স্টেশনে এনকোয়ারির সামনে ওয়েট করব। চিন্তা করবেন না।
গোয়েন্দা ভদ্রলোক পা বাড়িয়েছেন, কর্নেল বললেন, একটা কথা হালদারমশাই। আপনার একটা ছদ্মনাম দরকার।
হঃ। বলে হালদারমশাই সবেগে বেরিয়ে গেলেন।
ষষ্ঠীচরণ দীপকের জন্য কফি আর স্ন্যাক্স দিয়ে গেল। কর্নেল বললেন, ভজুয়ার বয়স কত? কতদিন তোমাদের বাড়িতে ছিল সে?
দীপক বলল, বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে। ওরা পুরুষানুক্রমে আমাদের ফ্যামিলিতে ছিল। জমিদার ফ্যামিলিতে যেমন হয়। একগাদা লোকজন থাকে। অবশ্য এখন আর নেই। ভজুয়া কিন্তু দুর্দান্ত সাহসী লোক ছিল। ভূতপ্রেতের গল্প বলত বটে, বিশ্বাস করত বলে মনে হয় না। আমার ছেলেবেলায় ওর বউ মারা যায়। কিন্তু ও আর বিয়ে করেনি। আমার অবাক লাগছে, ওর মতো সাহসী আর বলবান লোককে কী করে বলি দিতে পারল?
তুমি কি প্রেতাত্মায় বিশ্বাস করো?
নাহ। ওসব স্রেফ গুলতাপ্পি। ঠাকুরদা কী সব বোগাস গল্প ফেঁদে গেছেন, আমি একটুও বিশ্বাস করি না। বাবাও বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু হঠাৎ দু-দুটো নরবলির ঘটনা। তারপর পাতালঘর থেকে সিন্দুকের তালা ভেঙে কে কঙ্কাল সরাল। তাই বাবার মাথা খারাপ হয়ে গেল। কর্নেল। পাতালঘরের কথা আমি ঠাকুরমার কাছে শুনেছিলাম। কিন্তু সিন্দুকে যে কঙ্কাল আছে, তা আমি জানতাম না। নরবলির ঘটনার পর একরাত্রে বাবা আমাকে আর ভজুয়াকে ডেকে চুপিচুপি পাতালঘরে ঢুকলেন। পাতাল ঘরের দরজার তালা কিন্তু ভাঙা ছিল না। গতকাল সন্ধ্যায় বাবা আপনার কাছে সব কথা খুলে বলেননি।
হয়তো কঙ্কগড়ে গেলে বলবেন ভেবেছিলেন।
দীপক চাপা গলায় বলল, সিন্দুকের ভিতর কঙ্কাল সত্যিই ছিল কি? আমার বিশ্বাস হয় না। অতকালের পুরোনো কঙ্কাল। আস্ত থাকার কথা নয়। অথচ সিন্দুকে একটুকরো হাড়ও পড়ে নেই।
ভজুয়াকে কেউ ওভাবে খুন করবে কেন? তোমার কী ধারণা?
দীপক একটু চুপ করে থাকার পর বলল, সম্ভবত ভজুয়া কিছু জানত। তার মানে, শচীনদা আর জগাইকে কে বা কারা ওভাবে খুন করেছে, সে জানতে পেরেছিল। কারণ জগাই খুন হওয়ার পর ভজুয়া আমাকে বলেছিল, খামোখা একজন সাধুসন্ন্যাসী মানুষের বদনাম রটাচ্ছে লোকে। তার আত্মা স্বর্গে বাস করছেন ভগবানের কাছে। ভজুয়া বলেছিল, শিগগির সে এর বিহিত করবে।
ভজুয়া বলেছিল?
হ্যাঁ। দাদুর জ্যাঠামশাই সম্পর্কে ভজুয়ার খুব শ্রদ্ধা ছিল। তার ঠাকুরদার বাবা নাকি ওঁর সেবা করত। দীপক হঠাৎ একটু নড়ে বসল। মনে পড়ে গেল! গত মাসে দোতলা থেকে অনেক রাতে আমি ঝিলের ধারে জঙ্গলের ভেতর আলো দেখেছিলাম। ছেলেবেলা থেকে আমি তো আসানসোলে পড়াশোনা করেছি। কক্ষগড়ে সবসময় থাকিনি। তো সকালে মাকে কথাটা বললাম। মা বললেন, ওই জঙ্গলে আলো নতুন কিছু নয়। মা-ও নাকি অনেকবার দেখেছেন। আমি কিন্তু এতকাল পরে ওই একবার।
বললাম, কিসের আলো? মানে –টর্চ না হারিকেন?
না। মশালের আলো বলে মনে হয়েছিল।
কর্নেল চোখে হেসে বললেন, প্রেতাত্মারা টর্চ বা হারিকেন জ্বালে না জয়ন্ত!
দীপক বলল, আপনি কি ভূতপ্রেতে বিশ্বাস করেন?
প্রকৃতিতে রহস্যের শেষ নেই দিপু!
দীপক যেন একটু বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল! বলল, আমি চলি তা হলে।
আচ্ছা এসো।
দীপক বেরিয়ে গেলে বললাম, কঙ্কগড়ের সাংঘাতিক ভূতটা আপনাকে পেয়ে বসেছে মনে হচ্ছে। ভূত বা প্রেতাত্মার সঙ্গে প্রকৃতির কী সম্পর্ক?
কর্নেল গম্ভীর মুখে বললেন, আছে। প্রকৃতি চির-আদিম। ভূতপ্রেতও আদিম শক্তি, ডার্লিং!
