চশমার আড়ালে (ভাদুড়ি) – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১
জানলার ধারে সিট পেয়েছিলুম। বাইরে নীচের দিকে তাকিয়ে দেখলুম, রানওয়ে পড়িমরি পিছনে ছুটছে। একটু বাদেই প্লেন আকাশে উঠে পড়ল। এখন সব শান্ত। একটুও কাঁপুনি নেই, গতির ঝড়টাও টের পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু কানে আসছে চাপা একটা গোঁগোঁ শব্দ।
বোয়িং নয়, এয়ারবাল। আগের এয়ারবাসগুলোর তুলনায় আকারে একটু ছোট। কিন্তু ছিলছাম। ব্যাঙ্গালোরের দুর্ঘটনার পরে এই নতুন কেনা প্লেনের বহরকে একেবারে পুরোপুরি বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ইণ্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ক্ষতি হচ্ছিল কোটি-কোটি টাকা। দিল্লির জমানা তার কিছুদিন পরেই পালটে যায়। তা নইলে এই চমৎকার প্লেনগুলোকে যে আরও কতকাল বেকার বসিয়ে রাখা হত, কে জানে।
৫ মার্চ, মঙ্গলবার। দুপুর এখন দুটো। দেড়টায় টেক-অফের কথা ছিল। আধ ঘন্টা দেরিতে ছেড়েছে। পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যেই আগরতলায় পৌঁছে যাব।
পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে এদের আনুষ্ঠানিক স্বাগত সম্ভাষণ শেষ হয়েছে। প্রথমে হিন্দি, তারপর ইংরেজি। ক্যাপ্টেনের নাম কী বলল, বুঝলাম না। এখন রুটিনমাফিক বলা হচ্ছে, প্লেনের মধ্যে হঠাই যদি অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তো কী করতে হবে। একজন এয়ার হস্টেস হাতে কলমে সেটা দেখিয়েও দিচ্ছেন। কেমন যেন প্যান্টোমাইমের মতো মনে হয়। কেউ কি দেখছে? বুঝবার চেষ্টা করছে কিছু?
‘জলপান’ এসে গেল। হাতে-হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। আমারটা পড়েই রইল। বাড়ি থেকে খেয়ে বেরিয়েছি। খিদে নেই।
একটা সিগারেট ধরাতে পারলে ভাল হত। কিন্তু আজকাল তো এত অল্প সময়ের ‘উড়ান’-এ ধূমপান করতে দেওয়া হয় না। সিগারেটের প্যাকেটটা ফের পকেটে ঢুকিয়ে তাই সামনের জালি ব্যাগ থেকে খবরের কাগজ বার করে নিলুম একটা। তাতেও অবশ্য মন বসানো গেল না।
আসলে শুধু দুটো প্রশ্নই কাল রাত্তির থেকে আমার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। ভাদুড়িমশাই কোথায় গেলেন? আমিই বা এখন কোথায় যাচ্ছি? আগরতলাই আমার শেষ গন্তব্য জায়গা নয়, সেখান থেকে অন্য কোথাও আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু কোথায়? এ-দুটো প্রশ্নের উত্তর যতক্ষণ না পাচ্ছি, কোনও কিছুতেই ততক্ষণ আমি মন বসাতে পারব না।
ব্যাপারটা যে গোলমেলে, তাতে সন্দেহ নেই। কাল সওয়া দশটায় যখন অফিসে রওনা হই, তখন কি আমি ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পেরেছিলুম যে, এই রকম একটা ব্যাপার ঘটতে চলেছে? মোটেই না। রাত দশটায় বাড়ি ফিরেও কিছু বুঝতে পারিনি।
পৌনে এগারোটায় অফিসে পৌঁছই। শোলদা-পাড়ায় থাকি, সেখান থেকে অফিসে পৌঁছতে পনেরো মিনিটের বেশি সময় লাগবার কথা নয়। লাগেও না। কিন্তু কাল ফ্লাই-ওভার ছিল জ্যাম-জমাট, চৌরঙ্গি পাড়ায় পৌঁছতে পৌঁছতে আধ ঘন্টা কাবার।
অফিসে ঢুকে নিজের ঘরে গিয়ে বসতে-না-বসতেই ফোন বেজে উঠল।
“হ্যালো…..”
“আপনার একটা ফোন এসেছিল।”
গলা শুনে বুঝলুম, পি.বি. এক্স.-এর অপারেটর। বললুম, “কখন?”
“মিনিট পাঁচ-সাত আগে।”
“নাম বলেছে?”
“হ্যাঁ, মালতি সান্যাল। বললেন যে, খুব জরুরি দরকার। একটু বাদে আবার ফোন করবেন।”
“কী দরকার কিছু বললেন?”
“না!” অপারেটর-মেয়েটি আমতা-আমতা করে বলল, “না….মানে আমি ঠিক জিজ্ঞেস করিনি।”
“ঠিক আছে।” ফোন নামিয়ে রেখে কাজে বসে গেলুম।
মালতী আর ফোন করেনি। আমার করা উচিত ছিল। কিন্তু করা হয়নি। হরেক কাজে এমন জড়িয়ে গিয়েছিলুম যে, মালতীর কথা মনেই ছিল না।
মনে পড়ল রাত-দশটায় বাড়ি ফিরে। তাও হয়তো মনে পড়ত না, বাসন্তীর সঙ্গে কথা বলতে-বলতে যদি না অরুণ সান্যালের অর্থাৎ মালতীর স্বামীর প্রসঙ্গটা উঠত। ক’দিন ধরেই আমার শরীর বিশেষ ভাল যাচ্ছে না। মাথা ঘোরে, দুর্বল বোধ করি, ঘন্টা দুই-আড়াই একটানা কাজ করলেই হাঁফ ধরে যায়। বাসন্তীকে সে-কথা বলতে বলল, “অরুণবাবুকে দিয়ে তোমার ব্লাড প্রেশারটা একবার দেখিয়ে নাও।”
বাস, অমনি মনে পড়ল মালতীর কথা। বললুম, “মালতী কি ফোন করেছিল?”
“কই, না তো।” বাসন্তী বলল, “কেন, কিছু হয়েছে?”
কিছু না-বলে টেলিফোনের কাছে উঠে গিয়ে ডায়াল ঘোরাতে লাগলুম। লাইন পাওয়া গেল না। যতবার ডায়াল করি, ওদিক থেকে এনগেজড টোন বাজতে থাকে।
ফিরে এসে বাসন্তীকে বললুম, “মালতী আজ আমাদের অফিসে ফোন করেছিল। তখনও আমি অফিসে গিয়ে পৌঁছইনি। অপারেটর-মেয়েটি বলল, খুব নাকি জরুরি দরকার।”
“তুমি ফোন করেছিলে?”
“করা উচিত ছিল। কিন্তু করা হয়নি। ভুলে গিয়েছিলুম।”
“কৌশিকের কিছু হয়নি তো?”
“কৌশিককে নিয়ে ভাবছি না। সে তো ব্যাঙ্গালোরে ভাদুড়িমশাইয়ের কাছে রয়েছে। মামার কাছে রয়েছে যখন, তখন ভাবনার কিছু নেই। আমি ভাবছি অরুণের কথা। ডাক্তার-মানুষ, অথচ নিজেরই শরীরের যত্ন নেয় না। এদিকে কিছুদিন আগে ওর একটা ছোটখাটো স্ট্রোক হয়ে গিয়েছে। ভাবনা তো ওকে নিয়েই। কী করা যায় বলো তো?”
বাসন্তী বুঝতে পেরেছিল, মাথার মধ্যে দুশ্চিন্তা নিয়ে যদি শুতে যাই, তো রাত্তিরে আমার ঘুম হবে না। নিজেই ফোনের কাছে উঠে গিয়ে বার কয়েক ডায়াল করল। তারপর ফিরে এসে বলল, “না, এনগেজড!”
বললুম, “খবরটা তা হলে পাই কী করে?”
বাসন্তী বলল, “চলো, গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়া যাক। রাত প্রায় এগারোটা বাজে, রাস্তায় ভিড়ভাট্টা নেই, ঝট করে ঘুরে আসতে পারব।”
ছোট মেয়ে পারুল গেছে এলাহাবাদে, তার দাদার কাছে। স্বচ্ছন্দে অতএব বেরিয়ে পড়া যেতে পারে। বাসন্তী চটপট কাপড় পালটে নিল। তারপর দরজায় তালা লাগিয়ে সিঁড়ির ধাপে পা রেখেছি কি রাখিনি, শুনতে পেলুম, টেলিফোন বাজছে। নিশ্চয়ই মালতী, তক্ষুনি আবার তালা খুলে ভিতরে ঢুকে ফোনের রিসিভার তুললুম। কিন্তু ‘হ্যালো’ বলতেই ওদিক থেকে যাঁর কথা ভেসে এল, গলা শুনে তাঁকে চিনতে পারলুম না।
“মিঃ চ্যাটার্জি?”
“হ্যাঁ…..আপনি কে বলছেন?”
ওদিক থেকে যিনি কথা বলছিলেন, তিনি হাসলেন। এক মুহূর্ত পরে বললেন, “আমাকে আপনি চিনবেন না।”
“তা হলে?”
“যা বলছি শুনুন। মিঃ ভাদুড়িকে আজ সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
বললুম, “সে কী, ব্যাঙ্গালোর থেকে কেউ ফোন করেছিল?”
“ব্যাঙ্গালোর থেকে ফোন করবার কথা উঠছে কেন, এটা কলকাতার ব্যাপার।”
“তার মানে?”
“মানে আর কিছুই নয়, একটা কাজে কাল তিনি ব্যাঙ্গালোর থেকে কলকাতায় আসেন। উঠেছিলেন মিঃ সান্যালের বাড়িতে। আজ সকালে যথারীতি লেকের ধারে জগিং করতে যান। বাস, তারপর থেকে আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।”
“আপনি এসব কথা জানলেন কী করে?”
“আমি মিঃ সান্যালের প্রতিবেশী। শুনলুম মিসেস সান্যাল আপনাকে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ একবার ফোন করেছিলেন, কিন্তু আপনি তখন অফিসে ছিলেন না। তার খানিক বাদেই ওঁদের বাড়ির ফোনটা ডেড হয়ে যায়। একটু আগে ওঁরা অবশ্য একটা খবর পেয়েছেন।”
“লোক মারফত?”
“না, ফোন এসেছিল।”
“ফোন তো বলছেন ডেড, তা হলে ফোনে খবর এল কী করে?”
“মিঃ সান্যালের ধর্মতলার চেম্বারে। সেখানকার ফোন ঠিক আছে।”
“খবরটা ভাল তো?”
“মিঃ সান্যাল তো তা-ই বললেন। তিনি এই খানিকক্ষণ হল বাড়ি ফিরেছেন। বাড়ির ফোন ঠিক নেই বলে আমাকেই বললেন, আপনাকে সব জানাতে। …..তো যা বলছিলুম। মিঃ সান্যাল বলছেন, কালই দুপুরের ফ্লাইটে আপনি একবার আগরতলা যেতে পারলে ভাল হয়।”
“কেন? আগরতলার সঙ্গে এর সম্পর্ক কী?”
ভদ্রলোক আবার হাসলেন। তারপর বললেন, “তা তো জানি না।”
“আপনার নামটা জানতে পারি?”
“স্বচ্ছন্দে। প্রমোদ সেন। আমি ওঁর দু-তিনটে বাড়ি পরে থাকি।….আচ্ছা, নমস্কার।”
ভদ্রলোক ফোন ছেড়ে দিলেন। ফলে আর-কিছু জিজ্ঞেস করা গেল না।
রিসিভারটা নামিয়ে রেকে বাসন্তীর দিকে ঘুরে দাঁড়ালুম। বাসন্তী বলল, “কী ব্যাপার? কোনও খারাপ খবর?”
বললুম, “কিছু বুঝতে পারছি না। ভাদুড়িমশাই কাল কলকাতা এসেছেন। আজ সকালে জগিং করতে বেরিয়েছিলেন, তারপর থেকে নিখোঁজ।”
“সে কী! কে বলল?”
“মালতীদের এক প্রতিবেশী। নাম বললেন প্রমোদ সেন। বলছেন, কাল দুপুরের ফ্লাইটে আমাকে আগরতলা যেতে হবে। নাকি অরুণ তাই-ই চায়। যাব?”
“অরুণবাবুকে জিজ্ঞেস না করে যেয়ো না।”
“তাকে পাচ্ছি কোথায়? ওদের ফোন তো খারাপ।….তবে হ্যাঁ, চেম্বারের ফোনটা নাকি ঠিক আছে।”
“বেশ তা হলে কাল সকালে অরুণবাবুর চেম্বারে ফোন করে ব্যাপারটা জেনে নাও। আটটা নাগাদ উনি চেম্বারে বসেন।…..মোট কথা, ওঁকে জিজ্ঞেস না করে কিছু করাটা ঠিক হবে না।”
বললুম “অরুণ যদি যেতেও বলে, তাতেও কিন্তু ঝামেলা মিটছে না।”
“কীসের ঝামেলা?”
বললুম “টিকিটের। আগরতলায় বইমেলা চলছে। প্লেনের টিকিট পাওয়া শক্ত হবে।”
শেষপর্যন্ত অবশ্য না-করতে হল অরুণের চেম্বারে ফোন, না কাটতে হল টিকিট। আজ সকালে কলিং বেল বাজতে দরজা খুলে আমি অবাক। দেখি, শশাঙ্ক দাড়িয়ে রয়েছে।
অরুণের চেম্বারে শশাঙ্ক রিসেপশনিস্টের কাজ করে। বললুম, “কী ব্যাপার শশাঙ্ক?”
শশাঙ্ক আমার হাতে একটা লম্বাটে খাম তুলে দিয়ে বলল, “ডাক্তারবাবু পাঠিয়েছেন। ওর মধ্যে একটা চিঠি আছে, আর আগরতলার একটা টিকিট।”
খাম খুলে চিঠিটা বার করলুম। সংক্ষিপ্ত চিঠি। দুপুরের ফ্লাইটে আমি আগরতলা যেতে পারলে ভাল হয়। ভাদুড়িমশাই ভাল আছেন, তবে কোথায় আছেন, এখুনি সেটা জানা যাচ্ছে না। এত অল্প সময়ের মধ্যে আমার টিকিট পেতে অসুবিধে হতে পারে ভেবে কালই সে শশাঙ্ককে দিয়ে টিকিট কাটিয়ে রেখেছে। আমি যদি যেতে না পারি, তা হলে টিকিটটা যেন শশাঙ্কের হাতেই ফেরত দিই, অন্তত কিছু টাকা সে-ক্ষেত্রে রিফান্ড পাওয়া যাবে।
টিকিটের সঙ্গে চিঠিখানা একটা ক্লিপ দিয়ে আঁটা।
চিঠি পড়ে শশাঙ্কের দিকে তাকিয়ে বললুম, “তুমি আসায় ভালই হল। আর-একটু বাদেই ডাক্তারবাবুকে আমি তাঁর চেম্বারে ফোন করতে যাচ্ছিলুম।”
শশাঙ্ক বলল, “ফোন করলে তো তাঁকে পেতেন না।”
“কেন?”
“ডাক্তারবাবুর মায়ের খুব অসুখ।” শশাঙ্ক বলল, “আজ সকালেই ওঁরা বেহালা চলে গেলেন। চেম্বারও তাই বন্ধ।”
অরুণের পৈতৃক বাড়ি বেহালায়। সেখানকার ফোন-নম্বর আমার জানা নেই। শশাঙ্কও জানে না বলল। তবে বাড়িটা চেনে। এখান থেকে ও নাকি বেহালাতেই যাবে। বলল, “ডাক্তারবাবুকে যদি কিছু জানাবার থাকে তো আমাকে বলতে পারেন, আমি জানিয়ে দেব।”
বললুম, “এমনিতে কিছু জানাবার নেই। শুধু বোলো যে, আমি যাচ্ছি।”
শশাঙ্ক চলে গেল।
দরজা বন্ধ করে খাবার ঘরে ফিরে দেখলুম, বাসন্তী টেবিল সাজাচ্ছে। পট থেকে কাপে চা ঢালতে ঢালতে মুখ না তুলেই বলল, “ব্যাপারটা আমার ভাল ঠেকছে না।”
ভাল কি আমারই ঠেকছে? সবটাই কেমন যেন গোলমেলে ব্যাপার। আমাকে ফোন করবার পরেই বিগড়ে গেল মালতীদের ফোন। রাত্তিরে সে-কথা যিনি আমাকে জানালেন, সেই প্রমোদ সেনকে আমি চিনি না। সকালে শশাঙ্ক অবশ্য অরুণের চিঠি নিয়ে এসেছে। কিন্তু সে-চিঠির হস্তাক্ষর অরুণের না অন্য-কারও তাও আমার জানবার উপায় নেই। অরুণের গোটাকয় প্রেসক্রিপশন আমাদের বাড়িতে আছে ঠিকই, কিন্তু সে তো ইংরেজিতে লেখা, তার বাংলা হাতের লেখা আমি কখনও দেখিনি। এদিকে আবার মায়ের অসুখের খবর পেয়ে সে নাকি বেহালায় চলে গেছে। ফলে তার ধর্মতলার চেম্বারেও একটা ফোন করা গেল না। স্রেফ অন্যের কথার উপরে নির্ভর করে আমি আগরতলা যাচ্ছি। কেন যাচ্ছি, সেটুকু পর্যন্ত কেউ আমাকে জানায়নি। গিয়ে যে কী করব, কোথায় উঠব, কার সঙ্গে কথা বলব, তাও আমার জানা নেই। এ তো একেবারে বুনো হাঁস তাড়া করে বেড়াবার ব্যাপার
পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমটা ফের ‘জ্যান্ত’ হয়ে উঠতে আমার চমক ভাঙল। ওড়ার পালা শেষ হয়ে এল, ‘থোড়া বাদসে’ আমরা আগরতলার মাটি ছোঁব। একটু বাদেই ঘড়ঘড় করে শব্দ হল একটা। প্লেনের নোজ-হুইল এতক্ষণ গোটানো ছিল, সেটা আবার খুলে যাবার শব্দ। জানলায় চোখ রেখে দেখলুম, গাছপালা বাড়িঘরের আকার ক্রমেই বড় হয়ে চলেছে। তারপরে মৃদু একটা ঝাঁকুনি। প্লেন এখন আর পাখি নয়, রানওয়ের উপর দিয়ে সে এখন একটা চিতাবাঘের মতন দৌড়চ্ছে।
দৌড়ের সেই গতিও একসময় কমতে কমতে স্তব্ধ হয়ে গেল। যাত্রীরা উঠে দাঁড়িয়েছেন। মাথার উপরে লকার থেকে যে যাঁর জিনিসপত্র নামিয়ে নিচ্ছেন। প্লেনের দরজায় সিঁড়ি লেগেছে। এবারে আমরা নীচে নামব
নীচে নেমে টার্মিনালের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলুম যে, আগরতলায় তো আসা গেল, এবার এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে মোটামুটি শস্তা একটা হোটেলের খোঁজ করতে হবে। ঠিক এই সময়েই টার্মিনাল-বিল্ডিং থেকে ট্রাউজার্স আর শার্ট পরা বছর তেইশ-চব্বিশের একটি ছেলে আমার দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, “মিঃ চ্যাটার্জি?”
বললুম, “হ্যাঁ।”
ছেলেটি বলল, “প্লিজ কাম উইথ মি। জিজাজি আপনার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।”
