ফাগুয়ারা ভিলা (ঋজুদা) – বুদ্ধদেব গুহ

শেয়ার করুনঃ

এক

নেপালি দারোয়ান মস্ত বড় লালরঙা গেটটা ভিতর থেকে খুলে দিতেই ফাগুয়ারা ভিলা’র হাতার বাইরের লাল মাটির পথে পড়েই ভটকাই আমাকে বলেছিল, দেখলি, যা বলেছিলাম কলকাতাতে, ঠিক তাই-ই হল।

তিতির বলেছিল, আমাদের উপরে যেন অভিশাপ লেগেছে।

সত্যি!

আমি বলেছিলাম।

গাড়ি না এলে-গেলে বড় গেটটা সচরাচর খোলে না দারোয়ান। বড় গেটের পাশেই ছোট একটা গেট আছে মানুষের এবং বিশেষ করে সাধারণ মানুষদের যাওয়া-আসার জন্যে। তবু আমরা যে ভি. আই. পি. তা দারোয়ান আমাদের প্রতি তার মালিকদের ব্যবহারেই বুঝে নিয়েছে। দারোয়ান একজন নয়, দুজন, সম্ভবত বারো ঘণ্টা করে ডিউটি করে।

গেটের ভিতরের দিকে প্রায় ফিট দশেক কাউ ক্যাচার। গেট দৈবাৎ খোলা থাকলে যাতে গবাদি পশু ভিতরে ঢুকে না আসতে পারে, সেজন্যে।

এখন ঋজুদা আমাদের সঙ্গে আসেনি। বলেছে, তোরা হেঁটে আয়। চোখ কান খোলা রেখে হাটবি। তেমন কিছু দেখলে আমাকে ফিরে এসে বলবি।

‘তেমন কিছু’ মানে?

ভটকাই বোকার মতো প্রশ্ন করেছিল।

ঋজুদা এমনিতে বিরক্তই ছিল, কারণ নিরবিচ্ছিন্ন ছুটিটা দরকার ছিল ঋজুদারই সবচেয়ে বেশি। তা ভণ্ডুল হয়ে যাওয়াতে মেজাজ খিঁচড়েই ছিল ঋজুদার। তার উপরে ভটকাই-এর এরকম বোকা বোকা প্রশ্ন।

ঋজুদা বলল, ‘অ্যালবিনো’র রহস্য উদঘাটনের সময়ে তুই না-হয় ছিলি না সঙ্গে কিন্তু ‘কাঙ্গপোকপি’ ও ‘স্যেশেলস’-এ তো ছিলি! গোয়েন্দাগিরি কিছু তো করেছিস!

ভটকাই লজ্জিত হয়ে বলল, সরি, সরি।

এখনও সন্ধে হতে প্রায় দেড় ঘণ্টা বাকি। তবু জঙ্গলের অভ্যাসবশে আমরা যে যার টর্চ নিয়েই বেরিয়েছি।

আমার পয়েন্ট টু টু পিস্তলটাও আছে কোমরে বাঁধা উইন্ড-চিটারের তলায়। আর কারও কাছে কিছু নেই। আমাদের তো শুধু বেড়াতেই আসার কথা ছিল এখানে। ঋজুদার কোল্ট পিস্তলটা অবশ্য আছে ঋজুদার কাছে। সেটা আর আমারটা ছাড়া এবারে আর কোনও আগ্নেয়াস্ত্রই আনা হয়নি।

পথটা একটু এগিয়েই হঠাৎ বাঁদিকে ইউ-টার্ন নিয়েছে, একটা বহু প্রাচীন শিমূল গাছকে সাক্ষী রেখে। শিমূলটার গুঁড়িতে পাঁচটি ভাগ। একেক ভাগের আড়ালে জনাদশেক মানুষ স্বচ্ছন্দে লুকিয়ে থাকতে পারে। সেই শিমূলের মগডালে এক জোড়া লাল-গলা দুষ্প্রাপ্য শকুনের বাসা। শেষ বিকেলে তারা গলা লম্বা করে গলাতে রোদ পোয়াচ্ছে। পথের দুপাশে বড় শাল এবং শাল-চারার বনের ভিতরে ভিতরে হরজাই জঙ্গল। শিশু, গামহারা, বিজা, হরীতকী, আমলকী, খয়ের এবং আরও নানা গাছ। বিদায়ী সূর্যের আলো পড়াতে শীতের পাটকিলে ধুলোমলিন গাঢ় সবুজ জঙ্গল গায়ে এক মেরুনরঙা কাশ্মীরি মলিদা জড়িয়ে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। দুপাশ থেকে ছাতারেরা ডাকাডাকি করছে এমনভাবে যেন তাদের বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। তিতিরও ডাকছে টিউ টিউ করে। বনমোরগ ডেকে উঠল একবার।

ভাল শীত আছে। রাতে ঠান্ডা আরও বাড়বে বলে মনে হয়।

ইটখোরি নদীটা এঁকে-বেঁকে ঘুরে ঘুরে চলে গেছে ফাগুয়ারা ভিলাকে পাক দিয়ে। ভারি শান্ত সমাহিত চাল এ নদীর। কোনও তাড়াহুড়ো নেই, ক্ল্যাসিক উপন্যাসের চাল-এর মতো।

কিছু দুরেই পিতিজ-এর জঙ্গল। একসময়ে কাতরাস-এর কয়লা খাদানের শৌখিন মালিক বদি রায়ের একটি বাড়ি ছিল পিতিজ-এ। ঋজুদার সঙ্গে আলাপ ছিল বদিবাবুর। কলিয়ারি জাতীয়করণের পরে কাতরাস ছেড়ে এসে হাজারিবাগে বাড়ি করেছিলেন উনি। তিনি তো মারা গেছেনই বছর ছ-সাতেক হল। তাঁর দুই ছেলেও মারা গেছে কিছুদিন আগে।

আমরা দুদিকের জঙ্গল দেখতে দেখতে চলেছি, এমন সময়ে দেখা গেল কাঁধে বন্দুক ঝুলিয়ে একজন মৌলবি, বড় তালিবানি দাড়ি গালে, মাথাতে কালো রঙা ফেজ টুপি, লাল সবুজ চেক চেক লুঙ্গি পরে সাইকেল চালিয়ে আসছেন এদিকেই। তার সাইকেলের হ্যাঁন্ডেলের সঙ্গে লতা দিয়ে বাঁধা মাথা নিচু পা উপুড় করা দুটি বড়কা মোরগ ঝুলানো। জ্যান্ত নয়। উনি শিকার করেছেন বলে মনে হল!

ভটকাই গলা নামিয়ে বলল, লোকাল লোক। এর কাছ থেকে আমরা অনেক খবরাখবর পেতে পারি।

ঠিক।

আমি বললাম।

বলেই, বললাম, সালাম ওয়ালেকুম।

মৌলবি সাহেব ডান হাতটা হ্যাঁন্ডেল থেকে তুলে সেলাম জানিয়ে বললেন, ওয়ালেকুম আস্সালাম।

তারপরেই কাছে এসে সাইকেল থেকে নেমে পড়ে বললেন, আপ হি লোগ ফাগুয়ারা ভিলামে ঠারে হুঁয়ে হেঁ?

জি হাঁ।

আমি বললাম।

ঋজু বোস কওন হ্যায়?

ভটকাই বলল, উনোনে ত ফাগুয়ারা ভিলামেই হ্যায়। মগর আপ কি কৈসে মালুম?

ভিলাকি কেয়ারটেকারনে বাতায়া মুঝে। ইয়ে মোরগা তো উনহিকি দিয়া হুয়া বন্দুক ঔর টোটাসে মারা হ্যায় আপ হি লোগোঁকি লিয়ে।

বহত বহত্ সুক্রিয়া আপকি।

আমি বললাম।

ভটকাই বলল, লাগতা হ্যায়, বহতই আচ্ছা বন্দুক হ্যায়। ক্যা বন্দুক হ্যায় ঈ?

দেখিয়ে না। বন্দুক হ্যায় ব্যঙ্গ বন্দুকই হ্যায়। ম্যায় জানতে হ্যায় থোরি ক্যা বন্দুক? বলেই, কাধ থেকে বন্দুকটা খুলে দিলেন মৌলবি সাহেব। ব্যারেলে গুলি নেই সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে বন্দুকটা ভটকাই ভাল করে নেড়ে-চেড়ে দেখে ফেরত দিল মৌলবি সাহেবকে।

কী দেখলে?

তিতির বলল।

বুঝলাম না।

আমি দেখি। বলে, তিতির বন্দুকটা ভাল করে নেড়ে-চেড়ে দেখে বলল, বাবাঃ।

বললাম, কী ব্যাপার?

তিতির চোখ নাচিয়ে বলল, স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসসন।

তাই?

ভটকাই বলল, খুব দামি বুঝি?

ইয়েস।

স্মিথ এন্ড ওয়েসসন।

ভটকাই বলল।

বন্দুকটা ফেরত নিয়ে কাঁধে লটকাতে লটকাতে উনি বললেন, কী দুঃখের কথা বলুন তো। নিজের বাড়ির বারান্দাতে বসে কেউ আততায়ীর গুলিতে মারা যান। মেজকুমার মানুষও ভারী ভাল ছিলেন। নিঃসন্তান। তবে হ্যাঁ, পোষ্য নিয়েছেন তার একমাত্র শালির ছেলেকে। সে পুণেতে কী যেন পড়ে। গত বছরে বড়দিনের সময় এসেছিল। ছেলেটা একেবারে ভেঙে পড়েছে। কুড়ি বাইশ বছরের ছেলে।

কোথায় পড়ছে পুণেতে? কী পড়ছে?

তা জানি না।

তারপর বললেন, মেজকুমার বহত পড়ে লিখে আদমি থে। রায়পুরেই থাকতেন অধিকাংশ সময়। ওখানের কলেজেই পড়াতেন। বহতই সিম্পল আদমি থে। না জামাকাপড়ের চালিয়াতি ছিল না অন্য কোনও শখ। তিনি অজাতশত্রু মানুষ ছিলেন। তাকে যে কেউ গুলি মারতে পারে এ তো এই অঞ্চলের কারও মাথাতেই আসছে না।

নাম কী তার?

কার?

মেজকুমারের পোষ্যপুত্রের?

বিজিতনারায়ণ। কেন? তার সঙ্গে কখনও দেখা হয়নি আপনাদের?

না। বললাম আমি। (ভাবলাম, সদ্য পরিচিত মানুষের সঙ্গে খুনের তদন্ত করতে এসে বেশি কথা বলা ভাল নয়।)। আমরা তো মাত্র গতরাতেই এসে পৌঁছেছি। আপনিই তো বললেন তিনি ভেঙে পড়েছেন।

আপনাদের ছোটকুমার ছাড়া মালিকদের কারও সঙ্গেই দেখা হয়নি এখনও। ভটকাই বলল।

আমি বললাম, বড়কুমার কন্দর্পনারায়ণ এখানে আসেন না?

আসেন আসেন। পুজোর সময়ে আসেন প্রতি বছর আর দেওয়ালির পরে ফিরে যান। এই জায়গাটা তার খুবই প্রিয়। তবে তিনি লাগাতার থাকতে পারেন না। আসেন যান। তার সময় কোথায়? কত বড় ব্যবসা তার সারা দেশজোড়া। চা বাগান, ফাউন্ড্রি, আমদানি-রপ্তানি, কফির বাগিচা দক্ষিণের কুনুরে।

ভটকাই বলল, তাই?

তাই তো।

বলেই, মৌলবি সাহেব বললেন, আমি এগোই। বন্দুক গুলি মোরগা সব তো আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। রান্না হলে তবে না আপনারা খাবেন।

খাওয়ার এখন কী! সবে তো বিকেল।

গুলি কেন? গুলি তো খরচই হয়ে গেছে।

তিতির বলল।

মৌলবি সাহেব হেসে বললেন, আমার নাম এ অঞ্চলে ‘মোরগার যম। একটিই দুনম্বর ছররা দিয়ে দুটি মোরগ মেরেছি। আরেকটি গুলি বেঁচে গেছে।

সাব্বাস মৌলবি সাহেব।

আমি বললাম।

ডান হাতটা মাথায় ঠেকিয়ে, অভিনন্দন গ্রহণ করে মৌলবি সাহেব সাইকেলে উঠলেন।

আসলে আমরা সকলেই জানি যে, ঋজুদা কন্দর্পবাবুর অনুরোধেই এখানে বেড়াতে আসতে রাজি হয়েছিল কদিনের জন্যে। কন্দর্পবাবু আগে কিছু জানাননি, কিন্তু আমরা ট্রেনে ওঠার সময়ে নিজে স্টেশনে এসে একটা চিঠি দিয়েছিলেন ঋজুদার হাতে। ঋজুদাকে বলেছিলেন, এই চিঠিটা পড়বেন ঋজুবাবু। আমাকে ফিরাবেন না। আপনি ছাড়া আর কেউই আমাকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবেন না। ফিস-এর জন্যে আপনি ভাববেন না। আপনার ক্ষতি আমি পুষিয়ে দেব। ব্ল্যাঙ্ক চেক দেব আপনাকে।

ট্রেন ছাড়ার পরেই ঋজুদা চিঠিটা পড়ে কন্দর্পবাবুর উপরে মনে মনে খুবই বিরক্ত হয়েছিল। বলেছিল, ব্যবসাদার লোকদের এই দোষ। যেন তেন প্রকারেণ নিজের নিজের স্বার্থ পূরণ করতে পারলেই হল। প্রয়োজনে তারা পায়ে পড়ে যাবে তারপর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজ হয়ে গেলে চিনতেই পারবে না। তবে কন্দর্প শুক্ল মানুষটা খারাপ নয়। কিন্তু এ কী জবরদস্তি! জোর করে কেস গছানো।

চিঠিতে কী আছে?

তিতির বলেছিল।

ভটকাই বলেছিল, আমাদের খাওয়া-দাওয়া ঘুম আর রিল্যাক্স করা হবে না তাহলে। স্বর্গে গিয়েও কেঁকিতে পাড় দিতে হবে।

ঋজুদা বলল, হয়তো নয়। তবে রথ দেখা কলা বেচা করতে হবে আর কী!

আমরা একটা ফোর বার্থ এ. সি. কম্পার্টমেন্টে ছিলাম, তাই প্রাইভেসির অভাব ছিল না। আমাদের ঔৎসকু নিবৃত্তির জন্যে চিঠিটা তিতিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে ঋজুদা বলল, জোরে জোরে পড়। তুই সবচেয়ে ভাল পড়িস। অন্যরাও শুনবে।

তারপরই আমার দিকে ফিরে বলল, মোবাইলে এই নাম্বারটা লাগা তো রুদ্র, বলেই, নিজের মোবাইলে-এর সুইচ টিপে নাম্বারটা বের করে মোবাইলটাই দিয়ে দিল আমার হাতে। বোতাম টিপতেই ফোন বাজতে লাগল। ভাগ্যিস অফ করা নেই।

ওদিক থেকে হ্যালো’ শুনেই ঋজুদাকে দিয়ে দিলাম।

ঋজুদা বলল, আপনি কোথায়?

ঘরকি নজদিকমে। কম্যান্ড হসপিটালকি সামনেমে–আলিপুর।

দেখুন কন্দর্পবাবু, এভাবে মার্ডার কেস সালটানো যায় না। পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট, ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট এসব দরকার। পুলিশ কি কারও বিরুদ্ধে চার্জ ফ্রেম করেছে? কোন থানায় পড়বে আপনাদের ফাগুয়ারা ভিলা’? তা ছাড়া, আপনাদের, পরিবারসুদ্ধ সকলের একই সঙ্গে আসতে হবে একবার এখানে। আমার পক্ষে তো সব জায়গাতে গিয়ে ইনটারোগেট করা সম্ভব হবে না। কবে সকলে এখানে আসতে পারবেন জানাবেন। না আসতে পারলে, আমি ফিরে যাব।

আরও কীসব কথা বলে ঋজুদা মোবাইলটা অফফ করে দিল।

ভটকাই বলল, তোমার নাম্বারটা দিয়ে দিলে না?

তিতির বলল, বোকাটা। ঋজুদার নাম্বারটা তো কন্দর্পবাবুর মোবাইলে উঠেই গেছে।

তা ছাড়া, আমার সব নাম্বার ওঁর কাছে আছে।

ঋজুদা বলল।

ভটকাই কিছু বলল না।

ঋজুদা বলেছিল। পুলিশ চার্জ দেয়নি। কারওকে সন্দেহই করতে পারছে না। তারপরে বলল, ছোট জায়গার থানা–যে খুন করেছে সে কি আর খুন করার আগে থানাদারকে হাত করে রাখেনি! মোটা টাকার খাম ধরিয়ে রেখেছে। হয়তো তার উপরওয়ালাকেও খাইয়ে রেখেছে। সত্যি! দেশটা যে কী হয়ে গেল চোখের সামনে অথচ…।

আমাদের কি কিছুই করার নেই?

তিতির বলল।

নিশ্চয়ই আছে। প্রতিবাদ করতে হবে সব জায়গাতে। বাসে, ট্রামে, ট্রেনে, পথে-ঘাটে অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করতে হবে। আমার পায়ে কেউ মাড়িয়ে না যাওয়া পর্যন্ত চুপ করে থাকলে চলবে না। কারণ চুপ করে থাকলে আগামীকাল আমার পা-ও ওরা মাড়িয়ে যাবে। প্রতিবাদী না হলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

তিতির বলেছিল, সেই বঙ্কিমচন্দ্র লিখে গিয়েছিলেন না? ‘আইন! সে তো তামাশা মাত্র। বড়লোকরাই পয়সা খরচ করিয়া সে তামাশা দেখিতে পারে। এদেশে যার পয়সার জোর নেই তার কিছুই নেই।

ভটকাই বলেছিল, আর যার আছে তার সব আছে।

কন্দর্পবাবুরা বুঝি খুবই বড়লোক?

হ্যাঁ। কিন্তু যাদের অনেক থাকে তাদেরই আরও অনেক দরকার।

তাই তাদের পরিবারেরই কেউ হয়তো খুনটা করেছে। কে জানে! ব্যাপারটা বুঝতে পারছিস?

বুঝছি।

ঋজুদা বলেছিল, মার্ডার কেস-এর তদন্ত করতে হলে আগেই মোটিভটা কী তা জানার চেষ্টা করা দরকার। এই খুন করে কার লাভ বেশি সেটাই জানার চেষ্টা করতে হবে। তবে অনেক সময় অর্থ ছাড়াও অন্য মোটিভ থাকে। ঈর্ষা, প্রতিহিংসা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি।

আধ মাইলটাক এসেছি আমরা ফাগুয়ারা ভিলা থেকে। তিতির বলল ভটকাইকে, চলো, আরও একটু এগিয়ে গিয়ে আমরা পথ দিয়ে না ফিরে নদীর বুকের বালি মাড়িয়ে ফিরি। অ্যাডভেঞ্চারও হবে আর নদীর দিক থেকে ফাগুয়ারা ভিলাটা কেমন দেখায় তাও দেখা যাবে। এই জঙ্গলে কী কী জানোয়ার আছে। তারও একটা ধারণা হবে বালির উপরে তাদের পায়ের দাগ দেখে।

বাঃ! গুড আইডিয়া।

বলল, ভটকাই।

তারপর বলল, আচ্ছা, শিকার তো সারা দেশেই বে-আইনি এখন। তাওঁ ওই মৌলবি মারল কী করে মোরগ দুটো।

আমি বললাম, এ তো শুক্লদেরই প্রাইভেট শুটিং প্রিসার্ভ। এই এলাকার মধ্যে তাদের আইনই মান্য। দেশের আইনের কোনও এক্তিয়ার নেই।

তিতির বলল, ভালুক আবার খামচা খামচি করবে না তো? নদীর বুক ধরে হাঁটলে। আমরা তো নিরস্ত্র।

বললাম, আমার কাঁখে খোকা আছে।

ওই খোকা দিয়ে ভালুক পিঠ চুলকোবে।

ভারতীয় ভালুক হচ্ছে ইংলিশ ওয়েদারের চেয়েও বেশি আনপ্রেডিকটেবল। সে কী করে, কখন করে, তা আদৌ বলা যায় না। চলো, আরও পনেরো মিনিট হেঁটে আমরা নদীতে নামব।

ভটকাই বলল।

তিতির বলল, ওক্কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *